মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর গ্রামে এক গৃহবধূকে লঞ্চের কুলি ধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ওই ধর্ষকের নাম শাহালম। তবে সন্তানের পিতৃপরিরচয় নিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নির্যাতিতা।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার ভোরে ওই গৃহবধূ একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিলে চন্দনী বেগম নামের এক প্রতিবেশী নবাগত সন্তানকে জোর করে মায়ের কোল থেকে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার একদিন পর বুধবার দুপুরে ওই সন্তানকে উদ্ধার করেছে মাদারীপুর মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিজের বুকে সন্তান ফিরে পেয়ে খুশি হলেও পিতৃপরিচয় নিয়ে শঙ্কিত ওই গৃহবধূ।
পুলিশ, স্থানীয়, পারিবারিক ও ধর্ষিতা সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর গ্রামে আয়নাল ফকিরের মেয়ের সঙ্গে একই গ্রামের রজ্জব আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর সেই ঘরে তিনজন ছেলে সন্তান হয়। স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় ওই গৃহবধূ নিজ সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনোরকম সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দশ মাস আগে ওই গৃহবধূকে ঘরে একা পেয়ে একই গ্রামের হাসান মাতুব্বরের ছেলে লঞ্চের কুলি শাহালম মাতুব্বর ধর্ষণ করেন। লোকলজ্জার ভয়ে ওই গৃহবধূ ঘটনাটি চেপে যান। পরবর্তীতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
গৃহবধূর শারীরিক পরিবর্তন আসলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। সন্তান জন্মানোর প্রায় তিন মাস আগে পাচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টুকু মোল্লা, মেম্বর তাহেরসহ স্থানীয় লোকজন নিয়ে ওই গ্রামের রহিম হাওলাদারের বাড়িতে সালিশ বসে।
সালিশে শাহালম ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেন। এসময় শাহালম বলেন, সন্তান জন্মানোর পর রক্ত পরীক্ষা করে যদি প্রমাণ হয় এই সন্তান তার। তবে তিনি এই সন্তানের দায়ভার নেবেন। সালিশেও এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পরবর্তীতে মঙ্গলবার ভোরে বাবার বাড়িতে বসে ওই গৃহবধূ একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। এই ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শাহালম এলাকাবাসীকে অবৈধ সন্তান বলে উস্কে দেন। স্থানীয়রা এসে ওই গৃহবধূর ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেন। এসময় প্রতিবেশী সিকিম আলীর স্ত্রী চন্দনী বেগম ওই গৃহবধূর কোল থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে দেন।
নির্যাতিতা নিজের সন্তানকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে বুধবার সকালে মাদারীপুর মহিলা বিয়ষক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণা ও সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীকে জানান। পরে তারা মাদারীপুর মডেল থানায় জানালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল মোর্শেদ তাৎক্ষণিক ফোর্স পাঠিয়ে অভিযুক্ত চন্দনী বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
তার কথা মতো পুলিশ একই উপজেলার মস্তফাপুরের একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ওই গৃহবধূর কোলে ফিরিয়ে দেয়। পুলিশ এই ঘটনায় চন্দনী বেগম ও তার ছেলে বাবলু গৌড়াসহ তিনজনকে আটক করেছে।
নির্যাতিতা গৃহবধূ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, দশ মাস এই সন্তান পেটে ধরেছি। খেয়ে না খেয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্ট করে সন্তান পেটে বড় করে মানুষ করেছি। কিন্তু সেই সন্তান জন্ম নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষক শাহালম আশপাশের লোকজনকে অবৈধ সন্তান বলে উষ্কে দেয়। এসময় প্রতিবেশি চন্দনী বেগম আমার কোল থেকে আমার সন্তানকে ছিনিয়ে নেন। আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও পুলিশের আন্তরিকতায় আমার সন্তানকে আবার আমার বুকে ফিরে পেয়েছি। তবে আমি এই সন্তানের পিতৃপরিচয় কি দেবো? ও বড় হলে কোন পরিচয়ে বড় হবে। আমি জানি না। এই শিশুটি কোনো দোষ করেনি। আমি এর পিতৃপরিচয় চাই এবং অপরাধীদের শাস্তি চাই।
এসময় গৃহবধূ আরো বলেন, এই সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে আবার এই সন্তান চুরি হয়ে যেতে পারে। এমনকি আমার উপর অত্যচারও হতে পারে। তাই আমি কি করবো? কোথায় যাবে? জানি না।
মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহ্মুদা আক্তার কণা বলেন, মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে অন্যত্র দেয়া অন্যায়, অপরাধ। তাই এ ঘটনা শোনামাত্রই মডেল থানার ওসিকে জানানো হয়। তিনিই দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়েছে। এখন এই নিষ্পাপ শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্ষকের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মাদারীপুরের পাচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টুকু মোল্লা বলেন, কয়েক মাস আগে ধর্ষণের অভিযোগে একটি সালিশ হয়েছিলো। কিন্তু শাহালম ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন।
মাদারীপুর মডেল থানা পুলিেশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত শাহালমের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৮:২১ পিএম,১৪ অক্টোবর ২০১৫, বুধবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur