Home / লাইফস্টাইল / সকালের নাস্তা বাদ দিলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে!
সকালের নাস্তা বাদ দিলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে!

সকালের নাস্তা বাদ দিলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে!

আমাদেরকে প্রাণবন্ত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে সকালের নাস্তা। যা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে মনে করা হয়। যদিও আজকাল ডায়েট করার তাগিদে অনেকে খাওয়ার তালিকা থেকে সকালের নাস্তাই ছেঁটে ফেলেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতায় লুকিয়ে আছে মারাত্মক বিপদ। ওজন কমা বা ফিট থাকার বদলে ব্রেকফাস্ট বাদ দেয়ায় শরীরে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, যে সমস্ত মানুষ সকালের নাস্তা বাদ দেন তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন!

এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন ড. লিয়া চাহিল। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর নাস্তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। যারা সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়। এর ফলশ্রুতিতে স্ট্রোকও হতে পারে। আবার কানাডার নিউট্রিশনিস্টরা জানাচ্ছেন, যেহেতু ব্রেকফাস্ট আমাদের শরীরের মেটাবলিক কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে তাই ব্রেকফাস্ট না করার অভ্যাস শরীরে মেদ জমার বা ওবেসিটির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্রেকফাস্ট বাদ দিলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। ক্যালসিয়াম আমাদের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ব্রেকফাস্ট আমাদের শরীরের ফ্যাট বার্নিং এনার্জি বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

তাছাড়া, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ পাবলিক হেলথ স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাসের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ৪৬,২৮৯ জন নারীর ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় ৬ বছর ধরে। ফলাফল খুবই বিস্ময়কর। এতে বলা হয়, যে নারীরা নিয়মিত সকালের নাস্তা খান না তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। আর যে সকল কর্মজীবী নারী সকালের নাস্তা বাদ দেন তাদের ৫৪ শতাংশের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

আবার আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা বাদ দিতে চান তাহলে আরও একবার চিন্তা করে নিন। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা সকালের নাস্তা বাদ দেন তাদের ওজন দ্রুত বাড়ে। সকালের নাস্তা না খেলে চিনি ও চর্বি যুক্ত খাদ্য গ্রহণের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে তীব্র ক্ষুধা পায় বলে সারাদিনে আপনি যাই পান তাই খেতে থাকেন। ক্ষুধা যত বৃদ্ধি পাবে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। যা আপনার প্রতিদিনের ক্যালরি গ্রহণের মাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। তাই নিয়মিত সকালের নাস্তা বাদ দিলে ওজন কমার বদলে ওজন বৃদ্ধিই পাবে।

এদিকে, ১৯৯৯ সালে একটি সাইকোলজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে জানা যায় যে, সকালের নাস্তা এড়িয়ে গেলে মেজাজ ও এনার্জির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই গবেষণায় ১৪৪ জন স্বাস্থ্যবান মানুষকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি দলকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত সকালের নাস্তা দেয়া হয়, দ্বিতীয় দলকে শুধু কফি দেয়া হয় এবং তৃতীয় দলটিকে কোন নাস্তা দেয়া হয়নি। দেখা যায় যে, যে গ্রুপটিকে সকালের নাস্তা দেয়া হয়নি তাদের স্মৃতির দক্ষতা নিম্নতম পর্যায়ে চলে যায় এবং তাদের ক্লান্তিবোধের স্তর উচ্চতর পর্যায়ের হয়। অন্য দুই দলের মধ্যে তেমন তাৎপর্যপূর্ণ কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। ২০১৩ এর আগস্টে ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নাস্তা না করলে শরীরের এনার্জি কমে যায় এবং শারীরিক কর্মক্ষমতার স্তর ও কমতে থাকে। সকালের নাস্তা বাদ দেয়ার ফলে হতে পারে মাইগ্রেন। সেইসঙ্গে আপনার শরীরে পানির ঘাটতি ঘটতে পারে। সকালের নাস্তা বাদ দেয়ার নেগেটিভ প্রভাব পড়বে আপনার মুডে। আপনি খিটখিটে হয়ে উঠবেন। আপনার এনার্জিতে ঘাটতি হবে। অবসাদ ঘিরে ধরবে। কমে আসবে স্মৃতিশক্তি।

সকালের নাস্তায় কয়েকটি স্বাস্থ্যকর খাবার
১. ফল
সকালের নাস্তার জন্য সব চাইতে ভালো খাবার হচ্ছে ফলমূল। কলা, আপেল, কমলা, আঙুর ইত্যাদি ধরণের ফলমূল অথবা মৌসুমি ফলমূল দিয়ে সকালের নাস্তা করা সব চাইতে ভালো। ২টি কলা, ১টি আপেল, ১টি কমলা, ২/৩টি স্ট্রবেরি এভাবে শুধুমাত্র ফল দিয়ে নাস্তা করা সকালের জন্য ভালো। চাইলে ফলমূল দিয়ে সালাদের মত তৈরি করেও খেতে পারেন।

২. ওটস
ওটস জিনিসটা খেতে ভালো না লাগলেও এটি আমাদের দেহের জন্য অনেক ভালো একটি খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ওজন কমাতে এবং কলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওটসের জুড়ি নেই। সকালে হাবিজাবি খাবার বাদ দিয়ে একবাটি ওটস রাখুন। তবে কোন ফ্লেভারড বা চিনিযুক্ত ওটমিল খাবেন না। চিনির পরিবর্তে মধু এবং সাথে কিছু ফলমূল যোগ করে নিতে পারেন। ওটস খিচুড়িও নাস্তা হিসেবে চমৎকার।

৩. ডিম
ডিমকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস। প্রোটিনের সব চাইতে ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। এতে ক্যালোরিও থাকে বেশ কম। সকালের নাস্তায় অবশ্যই প্রত্যেকের ডিম খাওয়া উচিৎ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে সকালে ২ টি ডিম খেলেই যথেষ্ট। তবে যারা একটু বেশি স্বাস্থ্যবান তাদের ডিমের কুসুম এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। সকালে ডিম সেদ্ধ বা ডিমের অমলেট দিয়ে নাস্তা সারতে পারেন।

৪. আটার রুটি
সকালের নাস্তার জন্য বেশ ভালো একটি খাবার হচ্ছে আটার রুটি। বিশেষ করে যারা ভারী খাবার পছন্দ করেন। সকালে পাউরুটি বা ভাত খাবার চাইতে আটার রুটি সবজি ভাজি বা ডিম অথবা ঝোলের তরকারি কিংবা কলা দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো। এছাড়া রুটি বেশ ভালো এনার্জি সরবরাহ করে আমাদের দেহে যা পুরো দিনই রাখবে সতেজ। তবে অবশ্যই তেলে ভাজা পরটা থেকে দূরে থাকবেন।

৫. খিচুড়ি
অনেকেরই সকালে ভাত খাওয়ার অভ্যাস। তারা ভাতের বদলে সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন খিচুড়ি। তবে অবশ্যই সবজি খিচুড়ি। চালের পরিমাণ কমিয়ে বেশি পরিমাণে সবজি দিয়ে রান্না করা সবজি খিচুড়ি দিয়ে সেরে নিতে পারেন সকালের নাস্তা। এতে করে ভারী নাস্তা করা হলেও দেহে পৌঁছাবে পর্যাপ্ত পুষ্টি।

৬. দই
দিনের শুরুটা দই দিয়ে শুরু হোক অনেকেই তা চান না। কিন্তু দই দেহের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী একটি খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের গঠনে কাজ করে। দিনের শুরু দই দিয়ে করলে পুরো দিন আপনার দেহে থাকবে অফুরন্ত এনার্জি। ক্লান্তি স্পর্শ করবে না দিনের শেষেও। সুতরাং সকালের নাস্তায় কিছু ফলমূলের পাশাপাশি রাখুন দই।

৭. সালাদ
সালাদ মানেই যে শসা, টমেটো এবং গাজরের হতে হবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য এই সকল সবজির সাথে সালাদে ব্যবহার করতে পারেন সেদ্ধ ডিম বা সেদ্ধ মাংস অথবা সেদ্ধ ছোলাবুট। এছাড়া খেতে পারেন ফলমূলের সালাদ। এইসব ধরণের সালাদ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং দিনের শুরুটা চমৎকার করতে বেশ কার্যকরী।