রাজনীতি

চাঁদপুরের টিটুসহ যেসব আসনে বিএনপির সংস্কারপন্থীদের বিকল্প নেই

বিগত ১০ বছরেও প্রায় দুই ডজন আসনে সংস্কারপন্থী নেতাদের বিকল্প খুঁজে পায়নি বিএনপি। সঙ্গত কারণে আগামী নির্বাচনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কারপন্থী নেতাদের দলের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ওইসব আসনে দলের প্রতিনিধিত্ব করানোর কথা ভাবছে দলটি। ফলে সংস্কারপন্থী নেতারাও নতুন উদ্যোমে সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছেন।

২০০৭ সালের ২৫ জুন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। তাকে সমর্থনকারী নেতারা সংস্কারপন্থী বলে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর মান্নান ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলে সংস্কারপন্থীরা তার নেতৃত্বে তৎপরতা চালাতে থাকেন। কার্যত তখন থেকেই বিএনপিতে সংস্কার ও খালেদাপন্থী দুটি ধারা তৈরি হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিব হওয়ার পর বিভেদ আরও বাড়ে। কারণ, তিনি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনের নামে সংস্কারপন্থীদের বিতাড়িত করেন। ফলে মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকরা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বিএনপি চেয়ারপারসন ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর সংস্কারপন্থী প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ভোল পাল্টিয়ে মূলধারায় ফেরত আসেন। এরপরও প্রায় অর্ধশতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতা বিএনপির বাইরেই থেকে যান। তারা বিএনপির কর্মকা- এবং কমিটিতে আসতেও ব্যর্থ হন। প্রায় ১০ বছর দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এসব নেতা অন্য দলে যোগ দেননি। শুধু নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের দলের পক্ষে সুসংগঠিত রাখার চেষ্টা করেছেন। ফলে বিএনপির অন্য কোনো নেতা সংস্কারপন্থী নেতাদের আসনে বিকল্প হয়ে উঠতে পারেননি।

বিএনপি সূত্রমতে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার বিভিন্ন মামলায় সাজা হওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় নেতৃত্বে ভারসাম্য ধরে রাখতে সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার কৌশল নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রায় ১০ বছর পর বিএনপির আলোচিত প্রায় অর্ধশতাধিক সংস্কারপন্থী নেতাকে এবার ঘরে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এর ফলে দল নতুন উদ্যোমে সারাদেশে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত দুই ডজন আসনে অপেক্ষাকৃত ভালো প্রার্থী দিতে পারবে বিএনপি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলে সক্রিয় হতে না পারলেও গত ১০ বছরে নিজ এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা সংস্কারপন্থী নেতাদের মধ্যে অন্যতমরা হচ্ছেন নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, বরিশালের জহিরউদ্দিন স্বপন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, ঝালকাঠি-সদর ইলেন ভুট্টো, যশোরের মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নারায়ণগঞ্জের আতাউর রহমান আঙ্গুর, ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, আনোয়ার হোসেন খান চৌধুরী, পাবনার আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুরের এসএ সুলতান টিটু, কক্সবাজারের ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, বরগুনার নুরুল ইসলাম মনি, মেহেরপুরের আবদুল গণি, মৌলভীবাজারের এমএম শাহীন, নোয়াখালীর ফজলে আজিম, বগুড়ার ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জিএম সিরাজ, গাইবান্ধার শামীম কায়সার লিঙ্কন, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন, নওগাঁর সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর প্রমুখ। এসব নেতা তাদের নিজস্ব আসনে নিজ নিজ আধিপত্য ধরে রেখেছেন। দ্বিতীয় কোনো বিএনপি নেতা রাজনৈতিক মাঠে বা ভোটের দিক বিবেচনায় তাদের কাছে আসতে পারেনি। ১০ বছর পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের ক্ষমা না পেলেও নিজ নেতৃত্বে কর্মীদের সুসংগঠিত রাখতে পারায় তাদের নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে সংস্কারপন্থী অন্যতম দুই শীর্ষ নেতাকে ডেকে ভেদাভেদ ভুলে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিএনপিপ্রধান।

বিএনপি সূত্রমতে, সংস্কারপন্থী শীর্ষ নেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও বগুড়া ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল বারী ডিনা মারা গেলেও তাদের আসনে এখনো এই দুই নেতার অনুসারীদের আধিপত্য বেশি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এই দুই নেতার উত্তরসূরিদের কাছে টানার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আসনভিত্তিক না হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারপন্থী নেতাদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেডএ খান ও মোফাজ্জল করিম অন্যতম। তাদেরও রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর বিষয়টি ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপির মধ্যসারির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, সংস্কারপন্থীরা নানা চাপে পড়ে দলের সিস্টেমে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল ছেড়ে যেতে চাননি কেউই। এর প্রমাণ তারা ১০ বছরে নানাভাবে দিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই বিএনপিপ্রধান তাদের আবার কাছে টানছেন।

দীর্ঘদিন দলের বাইরে থেকেও নিজ এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার বিষয়ে সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল যায়যায়দিনকে বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সংস্কারের প্রক্রিয়ায় জড়াতে হয়েছিল। সঙ্গত কারণে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে ১০ বছর দূরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু দল থেকে একদিনের জন্যও দূরে ছিলেন না। সংগঠনের সব কাজ করেছেন। আর তিনবারের এমপি হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় কাজও করেছেন অনেক। এ কারণে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সব সময় তার পাশে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬:০০ পি.এম, ১৮ জুলাই ২০১৭,মঙ্গলবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Share