Home / সারাদেশ / চলমান সংকট মোকাবিলায় জাসদের ৬ প্রস্তাব
jsd

চলমান সংকট মোকাবিলায় জাসদের ৬ প্রস্তাব

চলমান সংকট মোকাবিলায় ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।

শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জাসদের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির সভা থেকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাড. রবিউল আলম,আফরোজা হক রীনা,আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম,শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন ও ওবায়দুর রহমান চুন্নু।

জাসদ মনে করে, দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলা বৈশ্বিক মহামারি করোনার অভিঘাত কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু,রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপরিণামদর্শী নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের জীবনেও সংকট ও দুর্ভোগ বেড়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বাস্তবসম্মত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে জীবন ও জীবিকার ভারসাম্য বজায় রেখে কৃষি ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা,সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর রাখা, অসহায়-নিরুপায়-আয়হীন-কর্মহীন মানুষকে নগদ অর্থ-খাদ্য-ত্রাণ ও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় অর্থনীতির সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

জাসদ আরও মনে করে,আন্তর্জাতিক সংকট বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বর্তমানে যে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে, তা মোকাবিলা করা সম্ভব এবং এ সক্ষমতা জাতীয় অর্থনীতির আছে। করোনা মোকাবিলায় জাতীয় অর্থনীতি সেই সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

বর্তমান সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন অস্থিরতা ও দিশেহারা ভাব পরিহার করা এবং সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা-বিশৃঙ্খলা দূর করা। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় জাসদের
প্রস্তাবসমূহ

বৈশ্বিক এ সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি সচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন সচল, বিদ্যুৎ উৎপাদন সচল, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা,সাধারণ মানুষের আয় ও জীবিকা ধরে রাখাই বাংলাদেশ সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা মোকাবিলায় এবং ভবিষ্যতের যেকোনো সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার পাশাপাশি আগামী ছয় মাসের জন্য সরকারকে বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ নিতে হবে।

১. অস্থিরতা ও দিশেহারাভাব ঝেরে ফেলে বর্তমান সংকটের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ, সমীক্ষা, চিত্র এবং এগুলোর সমাধানের বাস্তব ও যৌক্তিক পথ এবং উপায় সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের সামনে সুস্পষ্ট,স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা।

২. আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ওঠানামায় অস্থির হয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জনপরিবহন ও পণ্যপরিবহনসহ সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে রাজস্ব আয় সামান্য বাড়লেও সামগ্রিক অর্থনীতিতে সেই রাজস্ব আয়ের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বেশি। তাই আগামি ছয় মাসের জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। জ্বালানি তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার এবং প্রয়োজনে বাজেটের বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ সমন্বয় করে জ্বালানি খাত, কৃষি খাত, সারে ভর্তুকি দিতে হবে।

৩. জ্বালানি খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর আত্মঘাতী পথ থেকে বেরিয়ে আসার পাশাপাশি রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সম্পদের ওপর সরাসরি কর বৃদ্ধি, কর-ভ্যাট আদায়ে অটোমেশন চালু, জাতীয় পরিচয়পত্র ও গণশুমারির তথ্য ধরে করের আওতায় বহির্ভূত কর ফাঁকিদাতাদের চিহ্নিত করে করের আওতায় আনা,দেশের নয় লাখ হাট-বাজারের করের আওতাভুক্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনতে হবে।

৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান বাস্তব চিত্র স্বচ্ছ ও সুস্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরে এ খাতে নীতি-কৌশলগত ভুল ত্রুটি, সমন্বয়হীনতা,অপচয়,অপ্রয়োজনীয় ব্যয়,অলাভজনক ব্যয়,পদ্ধতিগত লোকসান, দুর্নীতি,লুটপাটের যত অভিযোগ সামনে এসেছে সেগুলোর যৌক্তিক জবাব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতির পুনঃমূল্যায়ন করে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। তার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে পুনর্গঠন করতে হবে।

৫. ‘বিলাস দ্রব্য’,‘অপ্রয়োজনীয় আমদানির সংজ্ঞা’সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করে ডলার সহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের ঘোষণা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় ও বিক্রয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে তা কঠোরভাবে দূর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে হবে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে রেমিট্যান্সের উপর প্রদত্ত প্রণোদনা ২-৩ % উন্নীত করতে হবে। ডলারের মূল্য নির্ধারণ খোলা বাজারের উপর ছেড়ে না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণেই রাখতে হবে। প্রতিবেশী ও বন্ধু দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প হিসাবে দেশীয় বা স্থানীয় বা গ্রহণযোগ্য মুদ্রা ব্যবহারের বিকল্প পথ গ্রহণ হবে। ব্যাংকের সুদ হার পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

৬. নিরুপায় ও অসহায়,আয়হীন, কর্মহীন মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাত ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ,দুর্নীতিমুক্ত ও প্রসারিত করতে হবে। নিম্ন আয়, স্বল্প আয়, সীমিত আয়ের মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে ‘খোলা বিক্রয়’ ব্যবস্থাকে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। কল-কারখানা-শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা করেছেন,জাতীয় অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী ধারায় পরিচালিত করেছেন- সেই প্রজ্ঞা ও সাহস নিয়ে আন্তর্জাতিক সংকটে জাতীয় অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী ধারায় পরিচালিত করেছেন- সেই প্রজ্ঞা ও সাহস নিয়ে আন্তর্জাতিক সংকটে জাতীয় অর্থনীতিতে যে সাময়িক বাড়তে চাপ তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করে জনগণকে স্বস্তি দিতে তার সক্ষমতা প্রদর্শনে সফল হবেন।

দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার, কার্যকরি সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাড. রবিউল আলম,আফরোজা হক রীনা,আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন ও ওবায়দুর রহমান চুন্নু।

১৩ আগস্ট ২০২২
এজি