নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২ বইয়ে ৪২১টি ভুলভ্রান্তি পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ ভুলগুলো সংশোধন করে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এ তথ্য জানান।
মশিউজ্জামান জানান, সংশোধনীগুলো এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এখন শিক্ষা অধিদপ্তরগুলোর মাধ্যমে জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। তাঁরা বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করবেন এবং শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বইয়ে তা সংশোধন করে দেবেন।
এনসিটিবির এই সদস্য আরও জানান, দুই শ্রেণির ২২টি বইয়ের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। আর বাকি চারটি বইয়ে কোনো ভুলভ্রান্তি পাওয়া যায়নি।
দেরিতে হলেও ভুলের সংশোধনী দেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেরিতে হলেও সংশোধনী দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভুল না শিখে সঠিক তথ্য জানতে পারবে। এত ভুল কেন হলো তার প্রকৃত কারণও বের করা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা যাতে সংশোধনীগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছায়, এ বিষয়েও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে হবে।’
সংশোধনীগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২০১টি ভুলের সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংশোধনী ৭০টি, আর সবচেয়ে কম বাংলা বইয়ে ৪টি। এ ছাড়া ইংরেজি বইয়ে ৩৫, গণিতে ৫, বিজ্ঞান ৭, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৩৬, ডিজিটাল প্রযুক্তি ১, জীবন ও জীবিকা ১৫, শিল্প ও সংস্কৃতি ৫, ইসলাম শিক্ষা ৭ এবং হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১৬টি সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।
আর সপ্তম শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২২০টি ভুলের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৫টি ভুলের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। বাংলা বইয়ে ২০, ইংরেজি ১১, গণিত ২৩, বিজ্ঞান ৪, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৫, ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫, জীবন ও জীবিকা ২৮, ইসলাম শিক্ষা ৯ এবং হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১২টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি।
আরও দেখা যায়, দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ভুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ভুল মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসসংক্রান্ত। এ ছাড়া অধিকাংশ বইয়ে ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এর মধ্যে কোনো কোনো শব্দের বানান একাধিকবার ভুল করা হয়েছে।
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে এসব শ্রেণিতে প্রণয়ন করা হয় পাঠ্যবই। ক্লাস শুরুর পর বইগুলোর নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। একপর্যায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ ছাড়া এই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ এবং বিজ্ঞানের ‘অনুশীলন’ বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধনের কথা জানানো হয়। পরে এই দুই শ্রেণির সব বইয়ের ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিটিবি।
গত ৩১ জানুয়ারি পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিমকে। সম্প্রতি এই কমিটি চারটি বইয়ের ভুল ও সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনের আলোকেই ভুলগুলো সংশোধন করা হলো।
টাইমস ডেস্ক/ ২৯ এপ্রিল ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur