Home / খেলাধুলা / শুভ জন্মদিন ‘আন্তর্জাতিক ফুটবল’
শুভ জন্মদিন ‘আন্তর্জাতিক ফুটবল’

শুভ জন্মদিন ‘আন্তর্জাতিক ফুটবল’

‘ফুটবল খেলাটা খুবই সহজ তবে সহজ ফুটবল খেলা খুবই কঠিন।’ লেখাটা কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফের এই উক্তিটা দিয়েই শুরু করা যাক। সহজ ফুটবল বলতে ‘টোটাল ফুটবলে’র জনক নিয়মবদ্ধ ফুটবলকেই বুঝিয়েছেন।

আজকের দিনে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবলের চেয়ে জনপ্রিয় খেলা আর একটিও নেই। আবেদনের দিক থেকেও কোটি কোটি মানুষের অন্যতম বড় বিনোদনের নাম ফুটবল। ফুটবল নিয়ে কচকচানির কারণ হলো আজ আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্মদিন। ১৮৭২ সালের আজকের দিনেই যাত্রা শুরু করেছিল পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ। প্রথম ফুটবল ম্যাচের কাহিনী জানার আগে খেলাটির ইতিহাস সম্পর্কে খানিকটা জেনে নেওয়া যাক।

ফুটবলের আদি জন্মস্থান নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেকের মতে, প্রাচীন রোমান সভ্যতায় ফুটবলের মতো গোলাকার বস্তু নিয়ে এক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল। গ্রিক সাম্রাজ্যেও এই ধরনের খেলা হতো। ঐতিহাসিকদের মতে, রোমান সভ্যতার খেলাটাই গ্রিক সাম্রাজ্যে বিস্তার লাভ করে। রোমে যে ধরনের বল দিয়ে খেলা হতো সেটা চামড়ার তৈরি একটি বিশেষ বস্তু চুল ও পালকে ভর্তি থাকত। সেটাই পা দিয়ে খেলা হতো। খেলাটির ধরন সম্পর্কে বিশদ কোনো বর্ণনা নেই। খ্রিস্টপূর্ব ৩১১ সালে জন্ম নেওয়া গ্রিক লেখক অ্যান্টিফেনিস তাঁর লেখায় তখনকার খেলাটির বর্ণনায় বলেছেন, ‘দুই দলে ভাগ হয়ে খেলাটা হতো। চামড়ার তৈরি বস্তুটিতে একজন লাথি মেরে অন্যজনকে দিত। সেই হিসাবে গ্রিসেই ফুটবলের জন্ম বলে অনেকেই মনে করছেন।

তবে মোটামুটি নিয়মকানুন মেনে ফুটবল খেলাটা শুরু হয় চীনে। গোলপোস্ট বানিয়ে দুই দলের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয় চীনে। চীনা ভাষায় এটির নাম ছিল ‘চু জু’। ফুটবলের ঐতিহাসিক কাঠামো হিসেবে ফিফা এই চু জুকেই স্বীকৃতি দিয়েছে।

ফুটবল খেলাটি রোম, গ্রিস বা চীন যেখানেই উদ্ভব হোক না কেন, ইংলিশদের হাত ধরেই ফুটবলের দেহ বেড়ে উঠেছে। আধুনিক ফুটবল খেলার জনক হচ্ছে ইংল্যান্ড। নবম শতকে ফুটবল ইংল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এগারো শতকের দিকে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোতে ফুটবল দারুণভাবে পসার লাভ করে। প্রতিটি স্কুলেই ফুটবল দল ছিল।

কয়েকশ বছর ধরে ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলা হলেও খেলাটির নির্দিষ্ট কোনো নিয়মকানুন ছিল না। যে যেভাবে পারত নিয়ম করে ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে পড়ত। ১৬ শতকের দিকে ফুটবলের বুট ব্যবহার করার প্রচলন শুরু হয়। এই শতকের শেষ দিকেই নারীরাও ফুটবল খেলতে শুরু করে। ১৮ শতকে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে প্রথম ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৭০৭ সালে কিংডম অব স্কটল্যান্ড যুক্ত হয় কিংডম অফ ইংল্যান্ডের সঙ্গে। তখন ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের সম্মিলিত নাম হয় কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন। এরপর ১৮০১ সালে কিংডম অব আয়ারল্যান্ড সংযুক্ত হলে এই চারটি দেশের সম্মিলিত নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড। ফুটবলের প্রসারে এই ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অঙ্গরাজ্যগুলোর সম্পর্ক উন্নয়নে ১৮৭০ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে পাঁচটি ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ‘দ্য ফুটবল অ্যাসেসিসিয়েশন’ (এ্ফএ)। ১৮৭০-৭২ সালে অনুষ্ঠিত এই সিরিজটা ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ইংল্যান্ড। বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়।

তবে সেই ম্যাচগুলো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। কারণ স্টকল্যান্ডের তখন পেশাদার ফুটবল সংস্থা ছিল না। অভিযোগ ওঠে, সেই ম্যাচগুলোতে খেলা স্কটিশ ফুটবলাররা কেউই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করত না। তারা মূলত স্কটিশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ছিল। বিতর্কটা মাথা চাড়া ওঠতেই এফএর প্রতিষ্ঠাতা চালর্স অ্যালকক আরেকটি ফুটবল ম্যাচের প্রস্তাব করেন। সেই ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কুইন্স পার্কের ১১ জন ফুটবলার অংশগ্রহণ করেন। ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড় বাছাই করা হয়েছিল সে সময়ের ইংল্যান্ডের নয়টি ক্লাব থেকে। ৩০ নভেম্বর ১৮৭২ সালে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।

সেই ম্যাচে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে স্কটিশরা। এক ক্লাবের সব ফুটবলার হওয়ার নিজেদের মধ্যে স্কটিশদের বোঝাপড়াটা দারুণ ছিল। ম্যাচে গোল পেয়েছিল স্কটল্যান্ড। তবে রেফারি সেটি বাতিল করে দেন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা গোলশূন্যভাবে ড্র হয়।

ফুটবল ইতিহাসে দারুণভাবে উল্লেখযোগ্য এই ম্যাচটি। এই ম্যাচের রেশ ধরেই ১৯০৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯০৬ সালে অলিম্পিকে জায়গা পায় ফুটবল। এমনকি ১৯৩৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনেও এই ম্যাচের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। ফুটবলের বাকি ইতিহাসটুকু তো সবারই জানা।

নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:৪০ পি.এম ৩০ বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২০১৭,
এএস

Leave a Reply