Home / সারাদেশ / শুধু নিজ সন্তানকেই সাহেব বানাবেন না
শুধু নিজ সন্তানকেই সাহেব বানাবেন না

শুধু নিজ সন্তানকেই সাহেব বানাবেন না

‎Monday, ‎01 ‎June, ‎2015 3:18:38 PM

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক:

ঢাকা সফররত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী বলেছেন, ‘নিজের সন্তানকে সাহেব বানানোর জন্য সব কিছু করা আর অন্যের সন্তানকে গোলাম বানিয়ে রাখা’ একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে লজ্জার। শুধু নিজ সন্তানকেই সাহেব বানাবেন না। অন্যদের কথাও ভাবুন। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, শিক্ষায় এক টাকা ব্যয় করলে ২০ বছর পর ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া যায়। বিকালে পিকেএসএফের আরেক সেমিনারে অংশ নিয়ে কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, বাল্যবিবাহ এক ধরনের অভিশাপ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের জন্য দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন কৈলাশ। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমার নিজের দেশের মতো। বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের এগিয়ে থাকা, পুলিশ বাহিনীতে বিপুল সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ ইত্যাদি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতিতে অত্যন্ত ধনী। আমাদের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে এবং মেয়ে শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করে। কিন্তু এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এখনো শিশু পাচার, নারী পাচার, শিশু শ্রম, শিশু নির্যাতন ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা গান্ধী বা কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই চাননি সমাজে বৈষম্য থাকুক। নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা, শিশুদের অধিকার সুরক্ষা, শিশুশ্রম বন্ধ করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে গণমাধ্যম, শিক্ষক, সুশীল সমাজ, পুলিশ বাহিনীসহ সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, পুলিশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক গভীর। আমি একজন পুলিশের সন্তান। ছোট বেলা থেকে পুলিশের সংস্পর্শে আমার বেড়ে ওঠা। পৃথিবীতে আমিই প্রথম কোনো পুলিশের সন্তান নোবেল পুরস্কার পেয়েছি। আশা করি আপনাদের সন্তানও বড় বড় সাফল্য বয়ে আনবে।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ : এদিকে সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে এক ডলার ব্যয় করলে ২০ বছর পর সেখান থেকে ১৫ গুণ রিটার্ন আসে। তাই দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো উচিত। এ জন্য আসন্ন বাজেটে এ খাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতি তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী তার সঙ্গে ছিলেন। কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, যে কোনো দেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ালে সেটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। ‘বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয় তা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ’-সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, শিক্ষা খাতে ব্যয় করলে এর রিটার্ন অনেক বেশি। বাজেটে শিক্ষা খাতে ও তরুণদের জন্য ব্যয় বাড়ানো উচিত। তরুণরাই সমাজের চালিকা শক্তি। আর শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। এটাকে মনে রেখে তরুণদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে কৈলাশ বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছি আমরা। প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অতি দারিদ্র্য হ্রাস, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়ে আনা এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হয়েছে এবং ভালো করছে মন্তব্য করেন তিনি।

পিকেএসএফের সেমিনারে যোগদান : এদিকে গতকাল বিকালে তিনি ‘শিক্ষার অধিকার’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে ক্যাম্পেইন ফল পপুলার এডুকেশন (সিএএমপিই) ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এ কনফারেন্সের আয়োজন করে। গণসাক্ষরতা অভিযান-এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী’র সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ ও এমডি আবদুল করিম প্রমুখ। কৈলাশ সত্যার্থী আরও বলেন, বাল্যবিবাহ যে কোনো দেশের জন্য বড় একটি অভিশাপ। বাংলাদেশে এখনো বহুল পরিমাণে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। যখন কোনো পরিবার গরিব, অসচ্ছল হয় তখন সে পরিবারের শিশুরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বয়স আঠারোর নিচে আনার পক্ষে সমর্থন করি না। মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স কমানোর ব্যাপারে খসড়া হলেও আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা আইন করবেন না। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। প্রধানমন্ত্রী ভিশন ২০২১ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। যদি আঠারোর নিচে বিয়ের বয়সের আইন হয়ে যায় তবে দেশের একটি বৃহৎ অংশের পরিবারের সঙ্গে অবিচার করা হবে। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, মৌলবাদ চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। সূত্র-বিডিপ্রতিদিন

চাঁদপুর টাইমস : ডেস্ক/‍ডিএইচ/২০১৫

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes 

চাঁদপুর টাইমস প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

আপনার মন্তব্য লিখুন…