নয় মাসের শিশু লামিম সবেমাত্র কথা বলতে শিখেছে। কেবল বাবাকে বাবা আর মাকে মা বলে ডাকতে পারে সে। মঙ্গলবার উঠোন ভর্তি মানুষ দেখে বারবার সে বা-বা, বা-বা বলে ডাকছিল। কিন্তু এত মানুষের ভিড়ে কাউকেই তার বাবার মতো মনে হয়নি। তাই এদিক সেদিক তাকিয়ে বাবাকে খুঁজে ফিরছিল সে। অথচ শিশু লামিম জানে না তার বাবা না ফেরার দেশে চলে গেছে। যতই বা-বা, বা-বা বলে ডাকুক, তার বাবা আর কোনদিন ফিরে আসবে না।
শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে উপস্থিত সকলের চোখে জল ছল ছল করছে। স্বজনরা চোখের জল ধরে রাখতে না পেরে হা হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে। মাত্র দুই বছরের মাথায় লামিমের স্বামীহারা মা লিবা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন…
চাঁদপুরে মাদককে কেন্দ্রে করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পথচারী নিহত
৩০ জুন মঙ্গলবার এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার মধ্যশ্রীরামদি এলাকার তাজু সরদারের বাড়িতে। এই বাড়ির সবচেয়ে শান্তশিষ্ট যুবক শামীম গাজী (২৪) লামিমের হতভাগা বাবা। আগের দিন মঙ্গলবার রাতে পাশ্ববর্তি এলাকায় মাদক বিক্রি কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় শামীম গাজী।
শামীম এর পিতা তাজু সরদার জানায়, প্রতিদিনের ন্যায় তার ছেলে সকালবেলা দুপুরের খাবার হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে কর্মস্থল হোটেল গ্রান্ড হিলশায় চালে যায়। সে ওই হোটেলে রিসিপশনে দায়িত্ব ছিল।
রাতে বাড়ি ফেরার পথে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে যায়। অন্ধকারে কোন এক পক্ষ তাকে বেদম পিটিয়ে আহত করে। সেখান থেকে স্বামীকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। রাতভর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সকাল ৭টায় মৃত্যুবরণ করে শামীম গাজী।
পরিবার সূত্রে জানা যায় মাত্র দুই বছর আগে প্রেম করে বিয়ে হয় শামীমের। সে অত্যন্ত ভদ্র নম্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল।
হোটেল গ্রান্ড হিলশার স্বত্বাধিকারী সাহেদুল হক মোর্শেদ জানান, এই হোটেলের সবচেয়ে নম্র ভদ্র এবং দায়িত্বশীল শামীম গাজী। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে ডিউটিতে আসে এবং রাতে সাড়ে আটটার দিকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যায়। যারা এই নিষ্পাপ ছেলেটিকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় পুরানবাজারে এর আগেও মাদকের কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাই মাদক নির্মূল এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান এবং নিহত শামীম গাজী দোষীদের শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।
প্রতিবেদকঃ আশিক বিন রহিম,৩০ জুন ২০২০