Home / সম্পাদকীয় / শিশু মৃত্যুঝুঁকি কমাতে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই
Editorial

শিশু মৃত্যুঝুঁকি কমাতে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই

৫ বছরের কম বয়েসের শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করলে বছরে দু’লাখ ২০ হাজার শিশু মৃত্যুঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে বলে এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন,‘আমরা প্রত্যেক বাবা-মাকেই বলে থাকি গুঁড়ো দুধ না খাওয়ানোর জন্য । কারণ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অবশ্যই কিছু না কিছু কেমিক্যাল থাকে যেটা নবজাতকসহ যেকোনও শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। শিশুদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে অবশ্যই গুঁড়ো দুধ থেকে দূরে রাখতে হবে ‘

এ বিষয়ে ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষক ফাহমিদা আক্তার বলেন,‘গুঁড়ো দুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর ! নবজাতকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ঘন ঘন অসুস্থ হয় । শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে! তারপরও ডাক্তাররাই সুকৌশলে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প হিসেবে প্রেসক্রিপশনে বিকল্প শিশুখাদ্যের নাম লেখেন।

বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশে পুষ্টি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা.এস কে রায় বলেছেন ,‘গুঁড়ো দুধ ও প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত নয়। কারণ এতে এন্টারোব্যাকটর সাকাজ্যাকি এবং সাল-মোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাওয়ালে ভবিষ্যতে শিশুদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কানের ইনফেকশন, বুকের ইনফেকশন, একজিমা, নিউমোনিয়া এবং শৈশবকালীন ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।’

বোতল, চুষনি ও বোঁটায় ‘বিসফেনল এ’ থাকে যা শিশুর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। গুঁড়ো দুধ বা প্রক্রিয়াজাত যে কোনও খাদ্যের ‘ডিএইচএ’ শিশুর বুদ্ধি বিকাশে কাজ করে না। বাচ্চাকে জন্মের পর থেকে প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে ৩১ % মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্য যদি সব মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ালে দেশের ৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’

ডা.এস কে রায় বলেন,‘কোনো ব্যক্তি মাতৃদুগ্ধ বিকল্প,শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য বা এর ব্যবহারের সরঞ্জামাদির আমদানি,স্থানীয়ভাবে উৎপাদন, বিপণনস, বিক্রয় বা বিতরণের উদ্দেশ্যে, কোনো বিজ্ঞাপন মুদ্রণ, প্রদর্শন, প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি গর্ভবতী বা দুগ্ধবতী মায়ের সাথে এসব পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা তাদের কোনো প্রতিনিধি যোগাযোগ করা বা কোনো ধরণের প্রলোভনমূলক প্রস্তাব দিতে পারবেন না।’

এ সংক্রান্ত আইনের অধীন কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের,তদন্ত,বিচার ও আপীল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে। তিনি আরও বলেন, জন্মের পর থেকে প্রথম ৬ মাস যাতে শুধু মায়ে বুকের দুধই খাওয়ানো হয় সেজন্য দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৫০টিরও বেশি প্রাইভেট হাসপাতালকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া দু’বছর আগ থেকে ব্রেস্টফিডিং কর্ণার স্থাপন নিয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি তৈরি করা হয়েছে এবং অনেকগুলো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মায়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মাসে অন্তত: একবার কাউনিসলিং করা যেতে পারে । আমরা আমা করি , দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

সম্পাদকীয় , ৬ ডিসেম্বর ২০১৯