শান্তিতে নোবেল পেলেন কারাবন্দী নার্গিস মোহাম্মদী

নারী অধিকার রক্ষা, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধ লড়াই ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইরানের নার্গিস মোহাম্মদী।

স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে নরওয়ের নোবেল কমিটি তাঁর নাম ঘোষণা করে। নারগিস মোহাম্মদি বর্তমানে কারাবন্দী।

নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ও সবার জন্য মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নারগিস মোহাম্মদির লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে নার্গিস মোহাম্মদীকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হলো।

নোবেল কমিটি আরও বলেছে, ` নারী অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে তাঁকে চরম ব্যক্তিগত মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। তাঁকে ইরান সরকার ১৩ বার কারাবন্দী করেছে। বিভিন্ন অভিযোগে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে এবং ১৫ বার তাঁকে দোররা মেরে শাস্তি দিয়েছে। ‘

এরই মধ্যে চলতি বছর চারটি ক্যাটাগরি—চিকিৎসা,পদার্থ, রসায়ন ও সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন নরওয়ের হুয়ান ফসে। তাঁর আগে চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন মুঙ্গি জি বাভেন্দি,লুই ই ব্রুস ও অ্যালেক্সেই আই একিমভ।

কোয়ান্টাম ডটের আবিষ্কার ও উন্নয়ন এবং ন্যানো ক্রিস্টাল প্রযুক্তি বা ন্যানোপার্টিক্যালের আকার ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে অবদান রাখার জন্য তাঁদের নোবেল পুরস্কার ভূষিত করা হয়।

নারগিস মোহাম্মদী বর্তমানে ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানে কুর্দিশ তরুণী মাআশা আমিনিকে সঠিকভাবে পর্দা না করার অভিযোগে গ্রেফতার করে দেশটির নীতি পুলিশ। পরে পুলিশ হেফাজতে মাআশা আমিনির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠে ইরান। ইরানে ১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে বড় আন্দোলন শুরু হয়।

ইরানের হাজার হাজার নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। তারা জেন, জিন্দেগি, আজাদি (নারী, জীবন, স্বাধীনতা) বলে স্লোগান দেন। নারী আন্দোলন দমাতে প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করে ইরান সরকার। পুলিশের হাতে অন্তত ৫শ আন্দোলনকারী নিহত হয়। কয়েক হাজার আন্দোলনকারী গুরুতর জখম হন। প্রায় ২০ হাজার কারাগারে বন্দি। এ আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠন নার্গিস মোহাম্মদি।

রসায়নের আগে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতে নেন যুক্তরাষ্ট্রের পিয়েরে অগস্তিনি, জার্মানির ফেরেন্স ক্রাউস এবং সুইডেনের অ্যানে হুইলিয়ে। আলোর স্বল্পতম স্পন্দন তৈরি করে অতি সংক্ষিপ্ত মুহূর্তকে বন্দী করার কৌশল নিয়ে গবেষণা করার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁদের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যান। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক ‘নিউক্লিওসাইড বেস’ পরিবর্তনের বিষয়ে আবিষ্কারের জন্য এ পুরস্কার পেলেন তাঁরা।

এমআরএনএ কীভাবে আমাদের ‘ইমিউন সিস্টেমের’ সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে সে বিষয়ে আমাদের বোধে মৌলিক পরিবর্তন এনেছেন এই দুজন। আধুনিক কালে মানব স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে টিকা আবিস্কারে অভূতপূর্ব হারে অবদান রেখেছেন তাঁরা।’

৬ অক্টোবর ২৯২৩
এজি

Share