চাঁদপুরে শাক-সবজির আবাদ সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর : উৎপাদন সোয়া ১ লাখ মে.টন

চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। মেঘনা,পদ্মা, মেঘনা ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী এ জেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় রবি,আউস,আমন ও বোরোর মত কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক গ্রীষ্মকালীন শাক-শবজি উৎপন্ন হয়ে থাকে।

চাঁদপুরে এবারের শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ ৫ হাজার ৫শ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২০ হাজার ৭শ মে.টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের ২০২১-২২ চলমান মৌসুমে রবি ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে ।

প্রাপ্ত দেয়া তথ্য মতে,চাঁদপুর সদরে এ বছর ২০২১-২০২২ শাক-সবজির চাষাবাদ ১০ হাজার ৫ শ’ ৫৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ৯ শ’ ৫৭ মে.টন।

মতলব উত্তরে চাষাবাদ ১ হাজার ১শ’ ৬৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৩শ ৫০ মে.টন,

মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ৩শ’৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৪শ ২৫ মে.টন,হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ৭শ’ ১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৫ শ ৫৮ মে.টন ।

শাহরাস্তির চাষাবাদ ৪ শ’ ৫ হক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৮ শ ১৩ মে.টন, কচুয়ায় চাষাবাদ ৮ শ’ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৪ শ ৯৬ মে.টন,

ফরিদগঞ্জের চাষাবাদ ৬ শ’ ৩৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৮ শ ১৮ মে.টন, হাইমচরে চাষাবাদ ১ হাজার ২ শ’ ৯ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৮ শ ১৮ মে.টন ।

বিশেষ করে চাঁদপুরের ১১টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ শাক-সবজি ব্যাপকভাবে চরবাসীরা চাষাবাদ করে থাকে। নারীরাই এসব শাক-সবজি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। গরু, ছাগল , হাঁস , মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালনে মেঘনা অববাহিকায় ও চরাঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণীভূমিকা পালন করে আসছে।

দিন-রাত পরিশ্রম করেই তারা এ শাক-সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে । কোনো কোনো এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তারা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষাবাদ করে আসছে। তাদের জীবিকার প্রধান বাহন কৃষি,সবজি চাষাবাদ ও হাঁস, মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন ।

চাঁদপুরে ধান, পাট, আলু, সয়াবিন, পেঁয়াজ,রসুন সরিষা,মরিচের পরেই শাক-সবজির স্থান। এটি এখন বেশ লাভজনক। চাঁদপুরের উৎপন্ন শাক-সবজি নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন শহরে বন্দরে চলে যায় ।

আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ,পরিবহনে সুবিধা,কৃষকদের শাক-সবজি চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত,কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা,বীজ,সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষীরা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষ করছে।

বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক শাক-সবজির উৎপাদন করে থাকে চাষীরা। অতীব দু:খের বিষয়-নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের কৃষিঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। চাষীরা ঋণসহায়তা পেলে শাক-সবজি চাষাবাদে আরোও উৎসাহী হতো।

চরাঞ্চলগুলি হলো-মতলবের চরইলিয়ট,চর কাসিম, সবজি কান্দি,ষষ্ট খন্ড বোরোচর,চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা,লগ্নিমারা,বাঁশগাড়ি,চিড়ারচর, ফতেজংগপুর,হাইমচরের ঈশানবালা,চরগাজীপুর,মনিপুর,মধ্যচর, মাঝিরবাজার, সাহেব বাজার ও চরভৈরবির বাবুরচর ইত্যাদি।

গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে-চিচিঙ্গা,করলা,ডেঁড়স,বরবটি,পটর,কাকরল, ধুন্দুল,ডাটা,ঝিংগা,বেগুন প্রভৃতি।চাঁদপুরের কুমারডুগি,মহামায়া,দেবপুর,মাস্টার বাজার, সুন্দরদিয়া এলাকায় ব্যাপকহারে ও বাণিজ্যিকভাবে চাষিরা এসব শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকে ।

চাঁদপুরের একজন কৃষিবিদ বলেন,‘চরাঞ্চলের উৎপন্ন শাক-সবজি খুবই সতেজ ও তরতাজা। এসব শাক-সবজিতে কোনো রকম ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। কেননা তারা বিক্রির জন্যে দিনের উঠানো গুলো দিনেই বাজারে বসে বিক্রি করে থাকেন।’

আবদুল গনি ,
৩ এপ্রিল ২০২২
এজি

Share