Home / চাঁদপুর / শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা
Dc.....

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা

শোকবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, রাজনীতিক, চিকিৎসক. আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বুদ্ধিজীবী দিবসের ওপর আলোচনা রাখেন।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরীফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক জিএম শাহীনের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো.আব্দুস সবুর মন্ডল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ,সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা তিনি ৭ মার্চের ভাষণে প্রকাশ করেছিলেন। এদেশের মুক্তিকামী ৭ মার্চের ভাষণে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের বাবা, মা,ভাই, বোনসহ স্বজনরা মারা গেছে তারাই বুঝেন বাংলাদেশের তাৎপর্য। আমরা সবাই স্বাধীনতার সুবিধাভোগি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে যেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে থুথুস্তম্ভ করা হোক। যাতে সেখানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ঘৃণা প্রকাশ করতে পারে। সক্রেটিসকে হত্যাকারীরাও উল্লাস করেছিলো। সেদিন ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছিলো। শুধু তাই নয় হত্যা করে তারা উল্লাস করেছিলো। এ হত্যাকান্ডে মানবিকতার বিন্দুমাত্র উপস্থিতি ছিলো না। তাই বিজয় দিবস আনন্দের দিন কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর আমাদের শোকের দিন।

তিনি আরো বলেন, ‘ চাঁদপুর প্রেসক্লাবকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানচ্ছি। কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলার জন্য আজকের এ আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতিসহ সকল বিষয় চাঁদপুরের গর্বের শেষ নেই। চাঁদপুর নিয়ে আমরা গর্ব করি। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কোনো দল কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্বিমত থাকতে পারে তবে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এমন একজন মহান নেতা যিনি তাঁর জীবদ্দশায় ফাঁসির কাষ্টে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থে আপোশ করেননি। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই এদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি ঘুমন্ত বাঙালী জাতিকে ধাপে ধাপে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে এদেশের স্বাধীনতার সমস্ত কিছু পরিস্কার করে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিসব। এ দিনে পাকিস্তানী বাহিনী ও দেশীয় দোসররা তাদের নিশ্চিত পরাজয় দেখে আমাদের জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলো। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশ স্বাধীন হলোও যাতে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে। আজকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির পেতাত্তারা এখনো সোচ্চার রয়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মুক্তিযুদ্দের নেতৃত্বদানকারী দল। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশ যেমনিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি ভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যাকর হয়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে আমাদের যা যা করণীয় আমরা তাই করবো।’

আরো বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী, শিক্ষাবিদ শহীদুল্লাহ মাস্টার, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.হামিদ মাস্টার, যুদ্ধকালীন বিএলএফ কমান্ডার হানিফ পাটওয়ারী, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ইঞ্জি.মো.সফিকুর রহমান,জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদার, জেলা প্রথামিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাফেজ আহমেদ, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, কাজী শাহাদাত, বিএম হান্নান, শহিদ পাটওয়ারী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, রহিম বাদশা, গিয়াস উদ্দিন মিলন, সোহেল রুশদী, জাকির হোসেন, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস প্রমুখ।

বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় ও কলঙ্কের দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নয় মাসের রক্তগঙ্গা পেরিয়ে জাতি যখন উদয়ের পথে দাঁড়িয়ে,ঠিক সে সময়ই রাতের আঁধারে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে। বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে এ দিনে দেশকে মেধাশূন্য করার পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের বরেণ্য সন্তানদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।’

বক্তারা বলেন, ‘সেদিন খুনিদের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করলেও তারা যেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু, দুর্বল ও দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। কারাণ তারা মেধা ও নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না-এমন নীল-নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই হায়েনারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল এ দিনে।’

এসময় চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল-ইমরান শোভন, ফাটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর সভাপতি এম এ লতিফ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইয়াসিন ইকরামসহ চাঁদপুরে কর্মরত প্রিন্ট এবং ইলেক্টনিক মিডিয়ার সকল পর্যায়ের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:৪০ পিএম,১৪ ডিসেম্বর ২০১৭,বৃহ্সপতিবার
এজি