দেশের প্রচলিত আইন-কানুন, বিধি-বিধান, ধর্মীয় আচার-আচরণ ও সামাজিক-রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে অল্প বয়সে মা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ যা নদী, সাগর, খাল, বিল, জলাশয় এবং এমনকি পুকুরে বাসরত অন্যান্য মাছ জাতির জন্য একটি অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে । এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে যা জানা গেল তা হচ্ছে:
ইলিশের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী হলো চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী জেলা । কেননা, তারা অল্প বয়সী ইলিশদের নদীতে অবাধ মেলামেশা ও বিচরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।
সারা বছর ছাড়াও বছরে দুই বার তারা কোন মনূষ্য জাতিকে নদীতে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ ধরতে দেয় না। ঐ সময় কোন মনূষ্য জেলে বাঁধা দিলে বা ইলিশ ধরলে তাকে জেল জরিমানা পর্যন্ত করে। ফলে ইলিশদের সাহস ও দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং তারা দিনে দিনে অবাধ মেলামেশা ও পাপাচারের মাধ্যমে অল্পবয়সে গর্ভবতী হচ্ছে। একটি পূর্ণ বয়স্ক মা ইলিশ এক বছরে প্রায় ২০ লক্ষ ডিম ছাড়ে ।
ফলে একটি ইলিশ হতে যদি ২০ লক্ষ ইলিশের বাচ্ছা জন্ম হয় এবং যদি অপ্রাপ্ত বয়সে ইলিশ গর্ভবতী হয়ে যায়, তাহলে আগামী পাঁচ দশ বছরে দেশের সব জলে কেবল ইলিশ আর ইলিশ পঙ্গপালের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যাবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের সকল ধরণের খাল-বিল,নদী-নালা, সাগর-মহাসাগরে জারজ ইলিশের নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হয়ে হাজার লক্ষ টন ইলিশ উৎপাদিত হবে, হাঁটে-বাজারে, অলিতে-গলিতে এবং শহরে-বন্দরে কম দামে ইলিশ বিক্রি হবে। ফলাফল, জলাশয় অতিক্রম করে বাড়ির আশপাশে ডোবা-নালা এমনকি বদ্ধ পুকুরেও চলে আসতে পারে এ ইলিশ! ফলে মনূষ্য সম্প্রদায় অনেক বেশি ইলিশ মাছ খাবে এবং এর ফলে অন্যান্য মাছের চাহিদা কমে যাবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্বাদের ইলিশ মাছ খেয়ে রসনা তৃপ্তি বা রসনা বিলাস করতে জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর ৪০ আইটেমের “ইলিশ রান্না” রেসিপি বইও বের করেছে, কিয়া আপা চ্যানেল “চোখের ইশারায়” ইলিশ রেসিপির লাইভ দিয়ে ব্যাপক প্রচার করছে। তাই এ সব বিপর্যয় এড়াতে ও অন্যান্য মাছের বংশ রক্ষার্থে এখনই ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে নদীতে বাসরত ইলিশদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক ।
প্রাথমিকভাবে উঠতি বেপরোয়া ইলিশদের মধ্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ মায়াবড়ি কিংবা রাজা **** বিতরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বল্প ও স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে ইলিশদের মধ্যে প্রচারণা, সচেতনতা, উদ্বুদ্ধকরণ সভা ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ইলিশ বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে । টকশো গুলোতে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করা দরকার।
এদিকে একদল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ইলিশের এ অবাধ মেলামেশা একদম সহ্য করতে ও মেনে নিতে পারছে না। তাদের মতে অবাধ মেলামেশার সুযোগে ইলিশরা নাকি পরোকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে, অনেক বনেদি ইলিশ পরিবারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে এবং ইলিশের সাথে অন্যান্য মাছের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে যা নদীতে একটি সামাজিক অবক্ষয়ের সূচনা । তাদের মতে, চাঁদপুরের ইলিশ নোয়াখালাইল্লা ইলিশের সাথে, বরিশালের ইলিশ লক্ষ্মীপুরের ইলিশের সাথে, পদ্মার ইলিশ মেঘনা-ডাকাতিয়া ইলিশের সাথে, ভোলার ইলিশ আশপাশের সব জেলার ইলিশের সাথে এবং বরগুনার ইলিশ পটুয়াখালীর ইলিশের সাথে গোপনে পরোকিয়ায় জড়িত মর্মে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট জেলা চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশালের বড় বড় রুই কাতলা মাছেরা বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও উঠতি বয়সি ইলিশরা কোন কথাই শুনছে না। ফলে নদীতে আজ এ অবাধ মেলামেশা সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হচ্ছে যা অন্যান্য প্রজাতির মাছের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে মর্মে বিশেষজ্ঞ মহল ধারণা করছেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পদ্মার একটি বড় রুই মেঘনার খালে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া তের মাস বয়সী ছেড়ি ইলিশের সাথে পালিয়ে নোয়াখালীতে গিয়ে ধরা পড়ে। পুলিশ তাদের ধরে কোর্টে চালান দিলে তারা পরস্পরকে ভালোবাসে মর্মে জানায় ।
এ খবর ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে নোয়াখালীর “ইলিশ ব্যবসায়ী ও ইলিশ প্রজনন বৃদ্ধি কমিটি”র সভাপতি সরপুটি চাকমা, “রুই-কাতলা সংরক্ষণ ব্যবসায়ী সমিতি”র সভাপতি ও “যেখানে জল সেখানেই মাছ চাষ কমিটি”র সাধারণ সম্পাদক তেলাপিয়া ভট্টাচার্য এবং “পাঁচ মিশালী মৎস্য কল্যাণ সমিতি”র উপদেষ্টা এডভোকেট বোয়াল ফরাজি ঐ জূটির পক্ষে আদালতে কৌশলী হিসেবে ভয়ংকর বিষ প্রদানকারী শিং মাছকে নিয়োগ দেন।
বিজ্ঞ আদালত উভয়ে পক্ষের বক্তব্য শুনে ভিন্ন ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ” মিয়া বিবি রাজি, কেয়া করেগা কাজি” এ নীতিতে অটল থেকে আইনের শাসন কায়েম ও সবার জন্যই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে তাদেরকে কোর্টের মধ্যে ইলিশের ডিম ও রুই মাছের দো-পেঁয়াজা দিয়ে শতাধিক উকিল, ম্যাজিস্ট্রেট, জজ, মুহুরী, পেশকার ও কোর্ট পুলিশকে আপ্যায়ন করে মহাধূমধামে বিশ লাখ টাকার মৎস খাদ্য দেন মোহর ধার্য করে বিবাহ দিয়ে তাদের স্ব স্ব পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেন। বর্ণিত সমিতি এ খরচ বহণ করেন ও তাদেরকে দুই বস্তা আটা, এক বস্তা চালের কুড়া ও বিবাহের আনুষঙ্গিক উপকরণ উপহার দেন। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কা বিধায় ছেড়ি ইলিশ ১৮ মাস না হওয়া পর্যন্ত বাপের বাড়িতে থাকবেন মর্মে বিজ্ঞ আদালত রায় দেন।
এ বিষয়টি একদম সঠিক হয়নি মর্মে মানবাধিকার কর্মী কই, টাকি, মলা, পুঁটি, টেংরা, লইট্টা, চিংড়ি, পাবদা, মেনি ও প্রেমিক মাছ জুটি অভিযোগ করেন। তাদের মতে ভালোবাসা শর্ত দিয়ে হয়না এবং ভালোবাসায় বাঁধা দেয়া ঠিক না। তাদের এক সাথে থাকতে দিলে জলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হতো।। তাছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাদের এ ভালোবাসা ভেস্তে যেতে পারে। তাই তারা আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে শীঘ্রই আপীল করবেন বলে জানান।
এ দিকে সারাদেশে এ জুটির পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মৎস সম্প্রদায় মানব বন্ধন ও হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে। বিশেষকরে অল্প বয়সে ও কম সময়ে অধিক বাচ্চা জন্মদানে সক্ষম রোহিঙ্গা তেলাপিয়া সম্প্রদায় এ জুটির জন্য মানব বন্ধন ছাড়াও কুতুপালং ক্যাম্পে একটি পুকুর খনন করে তাদের সেখানে স্থায়ী নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তাদের মতে, দেশে দুই বা ততোধিক কেজি ওজনের বড় বড় ইলিশগুলি বাস্তবে এ দেশের নহে, এগুলো বার্মিজ সাগরের লোনা জলের ইলিশ মাছ। তাই দেখতে বড় হলেও তেমন স্বাদ নেই, যেমনকরে ইলিশের প্রকৃত স্বাদ লুকিয়ে আছে চাঁনহুইরা বরিশাইল্যা ও নোয়াখালাইল্লা ইলিশের মধ্য। তাই এ জুটির হাইব্রিড বংশ বিস্তারের মাধ্যমে এ দেশে বড় জাতের ইলিশের প্রজনন ঘটানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ বলে রোহিঙ্গা তেলাপিয়া সম্প্রদায় দাবি করেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি মর্মে বিশেষজ্ঞ ও আমজনতা অভিমত পোষণ করেন।
লেখক- প্রাক্তন এডিসি ও ডিডিএলজি, চাঁদপুর।
বর্তমানে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক।
মোহাম্মদ আবদুল হাইয়ের আরো কিছু লেখা পড়তে ক্লিক করুন ‘শনিবারের শনির দশা’