Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পরেও ফায়ার স্টেশন নির্মাণে বাধা কোথায়?
Farid-gonj-Fiyre

শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পরেও ফায়ার স্টেশন নির্মাণে বাধা কোথায়?

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ফরিদগঞ্জে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মানে কেউ কথা রাখেনি! রূপ কথার গল্পের মতো কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেনো এটিকে করতে দিচ্ছে না। চাঁদপুর জেলার ঘনবসতিপূর্ণ ও আয়োতনে সবচেয়ে বড় উপজেলা হিসেবে পরিচিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা। এখানকার মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মানে বাধা কোথায়? এমন প্রশ্ন এখন সবার।

কয়েকবছরের মধ্যে বেশকিছু প্রাণহানিসহ শতকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্বেও কেনো জনগুরুত্বপূর্ণ এমন একটি দাবির প্রতি কেউই মনোযোগী হচ্ছেন না? আর কতো ক্ষয়ক্ষতি হলে টনক নড়বে উপজেলা, জেলা ও দেশের কর্ণধারদের? প্রশ্ন করতে থাকলে এমন শত-সহ¯্র প্রশ্ন চলে আসবে। কিন্তু সমাধান করতে একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।

এ উপজেলায় বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের জন্য সরকারী ভাবে প্রয়োজনীয় কোনো অর্থ বরাদ্ধ না হওয়ায় আজও ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নির্মানে আলোর মুখ দেখছে না। এমনটি মানতে চাইছেন না সচেতন মহল। এমন খোঁড়া অযুহাতে প্রতি বছরই উপজেলার বিভিন্ন বাজার কিংবা বাসা বাড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রানহানিসহ বিপুল পরিমান মালামালের ক্ষতিসাধন হয়েই আসছে।

সর্বশেষ শুক্রবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদগঞ্জ বাজারে কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে আগুণ লেগে ১২টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকা। স্থানীয় জনগনের এক ঘন্টা চেষ্টার পর আগুণ নিয়ন্ত্রনে আসে। পরে চাঁদপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আসলেও ক্ষুব্ধ জনগন ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের উপর চড়াও হয়। বাধ্য হয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটি চলে যায়। এসময় উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষুব্ধ ক’জন বাজার ব্যবসায়ী জানান, এভাবে আর কত দিন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে। ফরিদগঞ্জে ঘটেছে অসংখ্য অগ্নিকান্ডের ঘটনা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু অগ্নিকান্ড থেকে জনগনের জানমাল রক্ষার স্বার্থে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা আজও হয়নি। আজ ফরিদগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন না হওয়ার প্রতিবাদে চাঁদপুর থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে অগ্নিকান্ডে আজ এতো বিশাল ক্ষতি হতো না।

এদিকে গত কয়েক মাস পূর্বে ফরিদগঞ্জের একতা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। অপরদিকে ২০১৭ সালে পৌর সদরের কেরোয়া ব্রিজের পাশে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সংলগ্ন মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর পূর্বে কালির বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন বসত বাড়িতে অগ্নিকান্ডের খবর পাওয়া যায়। শুধু মাত্র একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে অগ্নিকান্ডে ক্ষতির পরিমান অনেক কমে আসতো বলে মনে করেন সচেতন জনগন।

জেলার সর্ববৃহৎ আয়োতনের এ উপজেলার প্রায় ৫ লাখ জনসাধারণের জানমাল রক্ষার স্বার্থে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি করে আসছে সাধারণ জনগনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

গত পহেলা এপ্রিল চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে ফরিদগঞ্জবাসীর অন্যতম প্রাণের দাবী ছিলো চাঁদপুর সেতুর টোল বাতিলের এবং ফরিদগঞ্জে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা হোক। ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনের জন্যে চাঁদপুর ৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের এমপি ড. শামছুল হক ভূইয়া, বিএনপি দলীয় ফরিদগঞ্জের সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ দাবি জানিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবে কবে নাগাদ এর বাস্তবায়ন হবে তা কেউই সুনির্দিষ্ট ভাবে আজও বলতে পারছেন না।

অপরদিকে ফরিদগঞ্জে বিভিন্ন সময় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের দাবিতে জনগন সোচ্চার হয়।

২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে উপজেলা সদরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরে সেই সময়ে ফরিদগঞ্জ পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মাহফুজুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক চাঁদপুর জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলামের নের্তৃত্বে ফায়ার ষ্টেশনের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন।
পৌর নির্বাচনে বিজয়ের পর মেয়র মাহফুজুল হক একটি অনুষ্ঠানে ঘোষনা করেন আগামী এক বছরের মধ্যে ফরিদগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ নিশ্চিত করবেন। তবে নানা জটিলতায় আজও তা হয়ে ওঠেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মাহফুজুল হক চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। এ নিয়ে কিছু জটিলতা থাকলেও যে কোনো মূল্যে ফরিদগঞ্জবাসির প্রাণের দাবি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মানে সকল জটিলতা কাটিয়ে সীঘ্রই আলোর মূখ দেখবে ফরিদগঞ্জবাসি। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যহত রেখেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র মাহফুজুল হক আরো বলেন, এ যাবতকাল বহুবার আমি ফরিদগঞ্জ ও চাঁদপুরে মাসিক উন্নয়ন সভায় ফরিদগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা উল্যেখ করে এ বিষয়ে দ্রæত একটি সন্তোষজনক পদক্ষেপ গ্রহনের জোরালো দাবি জানিয়েছি।

শুধু তাই নয়, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মানে জায়গা নির্ধারণ যখন অযুহাত হয়ে দাঁড়ালো, তখন আমি নিজে বেশকয়েকটি জায়গার সন্ধান দিয়েছি। এর মধ্যে ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা এলাকায় ৩৫ শতক সরকারি খাস জমি রয়েছে। গত সপ্তাহে উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় এমপি মহদয়ের কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি উপজেলা ভূমি কমিশনকে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ কবে নাগাদ ফরিদগঞ্জবাসির দাবিটি পূরণ হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র মাহফুজুল হক বলেন, আশার আলো হচ্ছে, এটি খুব শীঘ্রই হবে ইনশা’আল্লাহ। আমি যতটুকু জেনেছি, আগামি রোববার একটি ফাইনাল রিপোর্ট ভূমি মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। নতুন করে কোনো জটিলতা দেখা না দিলে এবং সব ঠিক থাকলে আশাকরি কয়েকমাসের মধ্যেই হয়তো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মান কাজ শুরু হবে।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচ এম মাহফুজুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এখানে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনের জন্যে এমপি মহোদয় ড. শামছুল হক ভুঁইয়া জনস্বার্থে আন্তরিক চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ না পাওয়ায় এর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

প্রতিবেদক : আতাউর রহমান সোহাগ

Leave a Reply