মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে বরিশাল বিভাগের অনেকেই লঞ্চে টিকিট কাটা শুরু করেছেন। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর জলপথে যাত্রীর চাপ অনেক কমেছে। এরপরও ঈদকে কেন্দ্র করে কিছুটা যাত্রী পাওয়ার আশা করছেন লঞ্চমালিকেরা। তবে এখন পর্যন্ত তেমন সাড়া নেই। যাত্রী পেতে টিকিটের দাম অর্ধেক করেছেন অনেকে।
মূলত ১৭ বা ১৮ এপ্রিল থেকে যাত্রার জন্য ঢাকা থেকে বরিশাল, হুলারহাট, ইলিশাসহ বিভিন্ন রুটের অগ্রিম টিকিট কাটা শুরু হয়েছে। আর ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরতে বরিশালে ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট নিচ্ছেন যাত্রীরা।
মঙ্গলবার সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ তেমন নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন টিকিট বিক্রেতারা। এএমকে শিপিং লাইনসের টিকিট বিক্রেতা মো. সোহাগ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইজ অগ্রিম টিকিট দেওয়া শুরু অইছে। সকাল থেকে দুপুর (২টা) পর্যন্ত ৭টা থেকে ৮টা টিকিট বিক্রি করছি, তাও অর্ধেক দামে। ঢাকা-বরগুনা রুটে ৩ হাজার ২০০ টাকার সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৬০০ টাকা আর ঢাকা-ইলিশা রুটে ২ হাজার ৪০০ টাকার টিকিট ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। যাত্রীর আকাল চলতে আছে। পদ্মা ব্রিজ হওয়ার পর থেইকাই যাত্রী কইম্যা গ্যাছে। অর্ধেক দামে টিকিট না দিলে তো এই যাত্রীগোও পাওয়া যাইবে না।’ যেখানে সরকার নির্ধারিত ডেকের টিকিট মূল্য ঢাকা-বরগুনা ৭১৬ টাকা এবং ঢাকা-ইলিশা ৪৩৩ টাকা।
সদরঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার হিসাবরক্ষক হান্নান খান জানান, প্রতিবছর এ সময়টাতে এমনিতেই যাত্রীর চাপ কম থাকে। এখন লঞ্চগুলো অফশোরে রাখা আছে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ডেকের চেয়ে ৪ গুণ এবং ডাবল কেবিনে ৮ গুণ। আর সোফা ও অ্যাটাচ বাথসহ ভিআইপি কেবিন ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
যাত্রীর চাপ কম থাকার বিষয়ে হান্নান খান বলেন, ‘১৭ থেকে ১৮ এপ্রিলের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়বে। তখন লঞ্চগুলোও ছাড়া হবে। আরামদায়ক যাত্রার জন্য এখনো কিন্তু লঞ্চের চাহিদা আছে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর গত কোরবানি ঈদেও কিন্তু মোটামুটি যাত্রী ছিল।’
এদিকে যাত্রীসংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ ছাড়ছে না। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে। সদরঘাট লঞ্চঘাটের টার্মিনালে বস্তা আর বড় ব্যাগ নিয়ে বিপাকে পড়া যাত্রী মো. হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হুলারআট যামু। কিন্তু আইয়া দেহি যাত্রী কম বইলা আইজ নাকি লঞ্চ যাইব না। এহন রাইতে এইহানেই থাইক্কা কাইল রওনা দেওয়া লাগবো।’
বেলা ২টার দিকে আরেক যাত্রী কাজী রাতুল বলেন, ‘আমি তো মুলাদি যাইতে চাইছিলাম। আইসা দেখি সকাল ও দুপুরের দুইটা লঞ্চই বন্ধ। রাতে ৮টার পর নাকি লঞ্চ ছাড়বে। এখন রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতেছে।’
যাত্রীর চাপ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এবারের ঈদে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম হবে বলেই ধারণা করছি। এ নিয়ে আমরা একটি সমীক্ষা করব, যেখানে লঞ্চঘাটে যাত্রীদের গোনা হবে এবার ঈদে কত যাত্রী এবার লঞ্চে ভ্রমণ করছেন। গত কোরবানির ঈদেও আগের তুলনায় যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম ছিল।’
বরিশালে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক খান রফিক জানান, আজ নগরের বিভিন্ন লঞ্চের কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে তেমন কোনো চাপ নেই। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে। লঞ্চমালিক ও বুকিং কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, ঈদে মানুষ বাড়ি ফিরবে ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। আর কর্মস্থলে ফিরবে ২৪ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল। সে অনুযায়ী সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ২ হাজার ২০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। সুন্দরবন লঞ্চের বুকিং ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, শনিবার থেকে তাঁরা আগাম টিকিট দিচ্ছেন। কিন্তু যাত্রী তেমন নেই।
নৌবন্দরে একাধিক লঞ্চের মাস্টারেরাও বলেন, এবার ঈদে তেমন চাপ থাকবে না। তবে ঝড়ঝঞ্ঝার ভয় আছে। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, এবারের ঈদে চাপ থাকবে না। ভাড়াও আগের মতোই। ফলে যাত্রীরা স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে যাত্রী খুবই কম। এখন মাত্র ২-৩টি লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে চলাচল করে। এ রুটে তাদের ২০টি লঞ্চ আছে। এর মধ্যে ১০টার মতো ঈদে চলতে পারে। অথচ পদ্মা সেতু চালুর আগে ২০টি লঞ্চে হতো না। এ জন্য ডাবল ট্রিপও দিতে হতো।’
যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নৌ পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএর সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। কালবৈশাখীর মৌসুম হওয়ায় লঞ্চমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ‘আগের কালবৈশাখীর মৌসুমগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম ও সচেতনতামূলক গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। আর আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া বুলেটিনের ভিত্তিতেই লঞ্চ ছাড়া হবে।’
টাইমস ডেস্ক/ ১২ এপ্রিল ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur