বিশেষ সংবাদ

লঞ্চেই সন্তান জন্ম দিলেন মা : যাত্রীদের মধ্যেই ছিলো চিকিৎসক ও নার্স

যাত্রাপথে হৃদরোগে কিংবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যায় মৃত্যু শয্যায় চলে যাওয়া এবং কিছু মানুষের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহায়তায় সেখান থেকে সুস্থ হয়ে আবার নতুনভাবে জীবন শুরু করার ঘটনা বিভিন্ন সিনেমাতে দেখা গেছে। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটলেও খুব কমই শোনা যায়।

সম্প্রতি ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি মানামীতে এমনই মানবিক একটি ঘটনা ঘটেছে। এক গর্ভধারিণী মা নিরাপদে তার সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কিছু মানবিক মানুষের হাত ধরে পৃথিবীর আলো দেখাতে পেরেছেন নবজাতক।

জানা গেছে, গত ২ জুলাই রাতে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হয় বিলাসবহুল এমভি মানামী লঞ্চ। মধ্যরাতে কেবিনের এক নারী যাত্রীর প্রসব বেদনায় প্রথম শ্রেণির করিডোরে বসে পড়েন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক কেবিন ক্রুদের চোখে পড়ে। তবে ওই নারীর সঙ্গে আর কোনো সহযাত্রীও ছিল না।

পরে লঞ্চের সিনিয়র সুপারভাইজার শাহাদাত হোসেন শুভর নির্দেশে পুরো লঞ্চে চিকিৎসক কিংবা প্রশিক্ষিত ধাত্রী খোঁজা শুরু হয়। এজন্য যাত্রীদের কেবিনের রেজিস্টার খাতা দেখার পাশাপাশি মাইকেও ঘোষণা দেয়া হয়। যেখানে একজন চিকিৎসক ও ধাত্রীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সৌভাগ্যক্রমে ওই লঞ্চের যাত্রী ছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মুহাম্মদ রেজাউল কবির ও মিডওয়াইফ (ধাত্রী) শিরিন। যারা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মধ্যরাতেই প্রসূতি মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তারপর চিকিৎসক ও ধাত্রীর চেষ্টায় লঞ্চের কেবিনেই নিরাপদে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় সেই গর্ভধারিণী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার সকালে এমভি মানামী লঞ্চের সিনিয়র সুপারভাইজার শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, যাত্রাপথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, যা মানামী লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সবসময় সমাধান করার চেষ্টাও করে থাকি। তবে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার কখনো হবো তা ভাবিনি। বিশেষ করে প্রি-ম্যাচিউর নবজাতকের জন্য আমাদের অনেকটা সময় ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসক-ধাত্রীসহ আমাদের সব স্টাফদের একটাই চেষ্টা ও সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা ছিল যেন, মা ও সন্তান সুস্থভাবে বেঁচে থাকেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন গর্ভধারিণী ওই নারী নিরাপদে বাচ্চা প্রসব করলেন তখন একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করছিল সবার।

শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ওই নারীর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগেই বরিশাল ঘাটে অ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে রাখা হয়েছিল। লঞ্চ ঘাটে নোঙর করার পরপরই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দীর্ঘ সময় পার করে ঘাটে অপেক্ষমাণ পরিবারের কাছে নিরাপদে মা ও নবজাতককে হস্তান্তর করা হয়।

বার্তা কক্ষ, ৭ জুলাই ২০২০

Share