রাজধানীর সদরঘাটের ঢাকা নদীবন্দরে রোববার লঞ্চগামী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এসময়যাত্রীরা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী উঠিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। আবার সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। রোববার সরেজমিনে ঢাকা নদীবন্দরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সূত্র জানায়, ঘরমুখো ভিড় এড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) প্রতিটি লঞ্চে ডেক যাত্রীদের জন্য ৩ফুট দূরত্বে চিহ্ন দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করতে নির্দেশ দিলেও তা মানছে না কোনো লঞ্চ মালিক ও কর্মচারীরা। অন্যান্য ছুটির সময় যেমন গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়, রোববারও তেমনটিই দেখা গেছে। এসময় অধিকাংশ যাত্রী মাস্ক ছাড়াই লঞ্চে আরোহন করতে দেখা গেছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুয়ায়ী একজন যাত্রীর জন্য সাড়ে ১৩ স্কয়ার ফুট জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। এ হিসাব অনুযায়ী যাত্রী ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করে সমুদ্র পরিবহন। কিন্তু এ হিসাবে যাত্রী পরিবহন করা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক যাত্রী থেকে আরেক যাত্রীর শারীরিক দূরত্ব তিন ফুটের বেশি থাকার কথা। কিন্তু লঞ্চমালিকেরা কোনো নীতিমালারই ধার ধারছেন না। মহামারির স্বাস্থ্যবিধিকেও আমলে নিচ্ছেন না।
এদিকে দেশের ৪১টি নৌ রুটের প্রতিটি লঞ্চেই সরকারি প্রজ্ঞাপনের দোহাই দিয়ে ৬০ শতাংশ ভাড়ার স্থলে শতভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করে দিয়েছে লঞ্চ মালিকরা। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে।
চাঁদপুরগামী যাত্রী আনোয়ার ও ফয়সাল জানান, একেতো ঠাসাঠাসি করে যাত্রী উঠিয়েছে তার উপর দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আগে চাঁদপুরে ডেকে যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা নেয়া হলেও এখন ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ ভাড়া ১৬০টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
আমির হোসেন নামে একযন যাত্রী বলেন, রফরফ লঞ্চে পরিবার নিয়ে বাড়ি রওনা হয়েছেন। সবসময় তিনি ১ম শ্রেণিতে ভ্রমণ করে থাকেন। নিয়মিত তিনি সিঙ্গেল কেবিন ৫০০ টাকা ডাবল কেবিন ৭শত থেকে ৯শত টাকায় ভ্রমণ করতেন। কিন্তু আজকে প্রতিটি সিঙ্গেল কেবিন ১হাজার ও ডাবল কেবিন ২হাজর টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
যাত্রীরা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। বরিশাল, বোলা, পটুয়াখালী,বরগুনাসহ সকল রুটেই এভাবে স্বস্থ্য বিধি উপেক্ষা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
বরিশালগামী সুন্দরবন-১১ লঞ্চের যাত্রী সোহাগ আহমেদ। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারকে দেশে পাঠানোর জন্য ওই লঞ্চে গেলে ভাড়া কথা শোনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা বলে জানিয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, এক সপ্তাহ আগেও বরিশালগামী প্রতিটি ডাবল কেবিন ২হাজার টাকায় ভ্রমণ করেছেন। অথচ আজকে লঞ্চে এসে ওই কেবিন ৫হাজার টাকায় ভাড়া করেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বলেন, প্রতিটি লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরও হঠাৎ করে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় হওয়ায় ওইভাবে মানা যাচ্ছে না। যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করছে। এছাড়া কোনো লঞ্চে সরকারি নিয়মের বাইরে ভাড়া আদায় করতে পারবে না। তাছাড়া প্রথম শ্রেণির যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হয় নাই। শুধুমাত্র ডেকের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। আপনার নিজের লঞ্চ সোনারতরীতে আজকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে-প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এতদিন আমরা যাত্রীদের ছাড় দিয়েছি। এখন আমাদের অবস্থাও খারাপ। তবে ৬০ শতাংশের বেশি কেউ আদায় করার কথা নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক খান বলেন, আমরা সদরঘাটে দিনরাত দেখছি, খুব কম যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছেন। মুখে মাস্ক না দিয়ে হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
স্বাস্থ্যবিধি না মানার পেছনে যাত্রীদের দায়ী করে বলেন, প্রতিটি লঞ্চে ডেক যাত্রীদের বসার জন্য ‘হোল বৃত্ত’ দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা তা মানছে না।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে অভিযোগের হটলাইন নম্বর ১৬১১৩ -এ ফোন করার জন্য যাত্রীদের অনুরোধ জানাই। কোনো লঞ্চের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,৪ এপ্রিল ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur