বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে শনিবার আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তেনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
১ ও ২ জুলাই তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরবর্তীতে যৌথ এক প্রেস ব্রিফিং-এ তারা তাদের সফরের বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
তাদের এই সফরের প্রাক্কালে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৪৮ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে ৫ কোটি ডলার বা ৪০০ কোটি টাকার অনুদান অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক বোর্ড। বৃহস্পতিবার রাতে এ অনুদান অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।
শুক্রবার বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, দুর্যোগ মোকাবেলা ও সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনুদান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য খাতে সহায়তার জন্য বৃহস্পতিবার পাঁচ কোটি ডলার ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক বোর্ড। ৪৮ কোটি ডলার সহায়তার এটি প্রথম ধাপ। কানাডা ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) যৌথভাবে স্বাস্থ্যখাতে অর্থের জোগান দিচ্ছে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাতৃত্বকালীন, নবজাতক-শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যসেবা, প্রজননজনিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পরিবার পরিকল্পনায় সহায়তা দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবেতর জীবন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। নিজেদের ভূমিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন পর্যন্ত তাদের যাবতীয় সহায়তা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব উদ্বাস্তু মানুষদের আশ্রয় দিতে উদারতা দেখানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন আব্যাহত রয়েছে।
কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী ম্যারি ক্লড বিবো ওই বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কানাডার দেয়া প্রত্যেকটি ডলারের বিপরীতে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেবার জন্য অতিরিক্ত পাঁচ ডলার করে ছাড়ের ব্যবস্থা করবে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংক খুব দ্রুত প্রায় অর্ধশত কোটি ডলার সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এ হতভাগা মানুষদের (রোহিঙ্গা) মৌলিক চাহিদা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধন অভিযান শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে এই রোহিঙ্গাদের অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও এখনও পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো উপযুক্ত পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি মিয়ানমারে। (যুগান্তর)