Home / সারাদেশ / রোজাকে সামনে রেখে পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে!
Piaz india

রোজাকে সামনে রেখে পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে!

* এখন সংকট নেই, তাহলে দাম বাড়ে কেন?
* আসছে রোজা, পেঁয়াজের তেজও বাড়ছে
* তিনদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়লো ১০ টাকা

রাজধানীর বাজারে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা। ফলে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে এখন গুণতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

এখন সংকট নেই, তাহলে দাম বাড়ে কেন? কারণ বাজার তদারকির কেউ নেই। যে যার ইচ্ছা মতো দাম বাড়ায়, এতে কোনো শাস্তি হয় না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটে। ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিমূল্য বেশি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, এরকম নানান অজুহাতে আড়ত ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, যার কারণে খুচরা দামও বেড়েছে।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ বেশি থাকা সত্ত্বেও বাড়তি দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পবিত্র মাস রমজান আসছে। রোজা আসলেই একশ্রেণির অসাধু মুনাফালোভী মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা কৌশলে পণ্যের দাম বাড়ায়। তা না হলে তিনদিনের ব্যবধানে কেন পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বাড়বে?

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায় ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৮-৩৫ টাকা। গত তিন থেকে চারদিন আগেও দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা আর আমদানি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ। এ সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ আট থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২ মে (বুধবার) প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৫ টাকায় ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩০-৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, গত তিন-চারদিন ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি-বিদেশি সব ধরনের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে কিনে খুচরায়ও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

মুগদার খুচরা বিক্রেতা শাহজাহান বলেন, গত রোববারও দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু সোমবার আড়তে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি কেজিতে দাম বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। দেশি পেঁয়াজ আড়তেই কেনা পড়েছে কেজিতে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। হঠাৎ করে এভাবে দাম বাড়লে আমাদের বিক্রি করতেও সমস্যা হয়। আর দাম বাড়া-কমার পেছনে আমাদের কিছু করার থাকে না।

তিনি বলেন, পাইকারি ও আড়তদারদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। গোডাউনে তাদের মাল ভরা। কেন যে দাম বাড়ায় কিছুই বুঝি না। কারণ এখানে সরকার বা কোনো দায়িত্বশীল মহলের নিয়ন্ত্রণ নেই।

এদিকে ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, চাহিদা ও সরবরাহ বিবেচনায় কাঁচাবাজারের পণ্যের দাম সবসময় উঠানামা করে। গত কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে মালিবাগ বাজারে রাকিবুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানালেন, ‘রমজান আসছে। তাই আগেভাগেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। বাজারের দোকানগুলোতে পেঁয়াজের অভাব নেই। তারপরও দাম বেশি। গত পরশু পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ টাকা, আজ বলছে ৪৫ টাকা। দেশে কী এমন ঘটলো এক লাফে পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে গেছে।’

এ ব্যাপারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়া অযৌক্তিক। রমজান আসছে, এটাকে পুঁজি করে মানুষের পকেট কাটার একটি পাঁয়তারা। গত বছর ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট। এখন সংকট নেই, তাহলে দাম বাড়ে কেন? কারণ বাজার তদারকির কেউ নেই। যে যার ইচ্ছা মতো দাম বাড়ায়, এতে কোনো শাস্তি হয় না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটে। ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের।’

‘কোনো পণ্যের অহেতুক দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি সরকার ব্যবস্থা নেয় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রমজানের বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টদের এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত’,- বলেন তিনি।

Leave a Reply