সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই জরুরি। এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন।
প্রশ্ন : শরীর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রথম পদক্ষেপ কী?
উত্তর : প্রথম যখন একজন রোগী আসেন আমাদের কাছে, আমরা রোগীর পূর্ণ ইতিহাস নেই। তার অসুখটি কীভাবে হলো, কখন থেকে হলো, কতদিন ধরে আছে- সম্পূর্ণ ইতিহাসটি তার কাছ থেকে নেওয়া হয়। নেওয়ার পর পারিবারিক ইতিহাস নেওয়া হয়। জানা হয়, তার পরিবারে এ সমস্ত রোগ আছে কি না।
এরপর তার অতীত ইতিহাস নেওয়া হয়। এই রোগটি তার আগে কখনো ছিল কি না, সেটি জানা হয়। তার মেডিকেল, সার্জিকেল দুটো ইতিহাসই নেওয়া হয়। নারী হলে তার নারীস্বাস্থ্যের ইতিহাসটিও নেওয়া হয়। তার পেশাগত ইতিহাসও নেওয়া হয়। সে ধূমপান করে কি না, মদ্যপান করে কি না, সেগুলোও জানা হয়। অথবা মাদকাসক্ত কি না সেগুলোও জানা হয়। এগুলো নেওয়ার পর জিজ্ঞেস করা হয়, আরো কোনো অসুবিধা আছে কি না।
এরপরের পর্যায় হলো, রিভিউ অব সিস্টেম। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা দেখা হয়। যদি রোগী কাশি নিয়ে আসে, তাকে জিজ্ঞেস করি, অ্যাজমা ছিল কি না, ব্রংকাইটিস ছিল কি না, অ্যালার্জি ছিল কি না।
রিভিউ অব সিস্টেমের (পদ্ধতির পর্যবেক্ষণ) ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে যাওয়া হয়। শুরু হয় চোখ দিয়ে। তার চোখে কোনা অসুবিধা আছে কি না। দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার সমস্যা আছে কি না। তার মাথাব্যথা রয়েছে কি না। তার প্রতিটি সিস্টেম (পদ্ধতি) অনুযায়ী অবস্থা জিজ্ঞেস করা হয়।
প্রশ্ন : এটি কি শুধু ইতিহাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না কি শারীরিক পরীক্ষার বিষয় রয়েছে?
উত্তর : ইতিহাস নেওয়ার পর আসবে শারীরিক পরীক্ষার বিষয়। ইতিহাস নেওয়ার পর আমরা শারীরিক পরীক্ষা করি। এ ক্ষেত্রে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরীক্ষা করা হয়। সমস্যা যাই নিয়ে আসুক না কেন সব অঙ্গের পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্ন : রোগ নির্ণয়ের জন্য কি এতটুকুই যথেষ্ট?
উত্তর : এই সমস্ত তথ্য নেওয়ার পর তখন অন্যান্য অসুখগুলোও দেখি। উদাহরণস্বরূপ, একটি লোক হয়তো শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসল। আমরা পরীক্ষা করে অ্যাজমা নিশ্চিত হলাম। এরপর যদি এর সঙ্গে তার আরো অসুবিধা থাকে, যেমন জ্বর, কফ এগুলো দেখে আমরা সে অনুযায়ী আগাব।
প্রশ্ন : যেকোনো রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় এসে যায়। সেগুলো যদি বলতেন।
উত্তর : এসব রোগ নির্ণয়ের পর ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে আমরা বুঝি রোগীর কী হয়েছে। ১০ ভাগ পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে। হয়তো রক্ত গণনার পরীক্ষা করলাম। বুকের এক্সরে দরকার হলে করলাম। অথবা অন্য কোনো পরীক্ষার দরকার হলে সেগুলো করি।
প্রশ্ন : জনসাধারণের খুব পরিচিত একটি অভিযোগ হলো, চিকিৎসকের কাছে গেলে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেয়। এই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
উত্তর : চিকিৎসকের দক্ষতা হলো রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগটির ধারণা করে নেওয়া। আমি পরীক্ষা ছাড়াই রোগ নির্ণয় করব, এটি আমার দক্ষতা। রোগনির্ণয়টিকে আরো বেশি জোর দেওয়ার জন্য পরীক্ষা করতে হবে। তবে পরীক্ষা না করলে অনেক সময় সমস্যা হতে পারে বলে এটি করা হয়। নয়তো পরীক্ষা করা টাকার অপচয়। আমাদের পরীক্ষাগুলো হতে হবে যথোপযুক্ত।
প্রশ্ন : রোগীর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্বের বিষয়ে একটু বলুন।
উত্তর : পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা হলো, একজন লোক একজন চিকিৎসকের কাছে এলো। চিকিৎসককে অবশ্যই চিকিৎসার নতুন নতুন বিষয় সম্বন্ধে জানতে হবে। কোনটার পরীক্ষা করতে হবে, কোন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, কখন দিতে হবে- চিকিৎসকের এ বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানতে হবে। চিকিৎসকদের চিকিৎসার নতুন অবস্থা পর্যন্ত জ্ঞান থাকতে হবে। তাঁকে প্রাইমারি কেয়ারের (প্রাথমিক যত্ন) বিষয়টি বুঝতে হবে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রোগীর সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে?
উত্তর : এখানে আসলে এই যত্নটা তেমনভাবে হচ্ছে না। আমি দেশে ফিরলে কয়েকশ রোগী দেখি। এমনকি রাত ১২টা পর্যন্ত রোগী দেখি। কারণ এসব রোগী অনেক দূর থেকে আসেন। বিনা পয়সাতেই দেখি। এই পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষাটা হচ্ছে না। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও রোগী সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। সব প্রাইমারি কেয়ার পর্যায়ে এবং সরকারি পর্যায়ে একটি শিক্ষা থাকা উচিত। চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে ভালো হয়।
সূত্র : এনটিভি
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur