চাঁদপুর অত্যাধুনিক রেলস্টেশনের নবনির্মিত প্লাটফর্মের বিরাট একটি অংশ ভেঙে গেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন রেলওয়ে রেস্ট হাউসের সামনে প্লাটফর্মের প্রায় ১০০ ফুট দেয়াল পর্যায়ক্রমে ভেঙে পড়ে। চট্টগ্রামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ এ কাজটি করছে।
তবে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নিতিতে নিন্মমানের ইট, বালি, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
১৯ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে সরজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর রেলওয়ের বড় স্টেশনের নির্মাণাধীন প্লাটফর্মের পশ্চিম পাশের উত্তর অংশের প্রায় ১০০ ফুট গাইড ওয়ালের ইটের গাঁথুনি ভেঙে পড়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়,সপ্তাহ খানেক পূর্বে নবনির্মিত প্লাটফর্মের এই গাইড ওয়ালের কাজ করা হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ না যেতেই ওই গাইড ওয়ালের প্রায় ১০০ ফুট অংশ ভেঙ্গে পড়ে যায়। এর মুল কারন হচ্ছে ইটের গাঁথুনিতে বালিতে কম সিমেন্ট ব্যবহার করা।
জানা যায়, গত ২৯ জুন চাঁদপুর রেলওয়ে সীমানা পরিদর্শককালে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক মাে:জাহাঙ্গীর হােসেন চাঁদপুরে রেলের অবকাঠামাে ও রেলের সম্পত্তিতে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা পরিদর্শন করেন।
ওই সময় তিনি বলেন, চাঁদপুরে অচিরেই অত্যাধুনিক রেলস্টেশন ও রেলের ডবল লাইন নির্মিত হবে বলে ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় দুই আড়াই মাস পূর্বে চাঁদপুর রেলওয়ের বড় স্টেশনটি অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণের লক্ষে প্লাটফর্মের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু প্লাফর্মের সেই নব নির্মাণাধীন চলমান কাজের ১০ ইঞ্চি গাইড ওয়াল ধসে পড়ে।
চাঁদপুর বড় ষ্টেশন এলাকার আমির উদ্দিন মিন্টু খান, নুরু বেপারী, মোবারক গাজী, নয়ন ছৈয়াল, ইউসুফ হাওলাদারসহ একাধিক ব্যক্তি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘গত সাত আট দিন পূর্বে চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশনের প্লাটফর্মের তিন ফুট উচ্চতার গাইড ওয়ালটির কাজ করা হয়েছে। রোববার দুপুরে গাইড ওয়ালের মাঝখানে ভরাটকৃত বালি বসার জন্য পানি দেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো ইট বালু সিমেন্ট এবং বালিতে সিমেন্ট কম দেওয়ার কারণে সপ্তাহ না পেরোতেই প্ল্যাটফর্মের নবনির্মিত এই গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। তাদের অভিযোগ গাইড ওয়ালটি মাটির গভীর থেকে না উঠানোর কারনে এবং নির্মান সামগ্রী নিন্মমানের ও বালিতে সিমেন্ট কম দেয়ার কারনেই এমনটি ঘটেছে।’
প্লাটফর্মের নবনির্মিত কাজের সাপ কণ্টেকটার মনা মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ঠিকঠাক মতোই কাজ করেছি। বৃষ্টির পানির চাপের কারণে গাইড ওয়াল ভেঙে পড়েছে। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকাদারের বক্তব্য নেয়ার জন্য নাম্বার চাইলে তিনি তা দিতে রাজি হননি। তার কাছে কোন তথ্য নেই বলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার জানান, ‘স্টেশনের এই কাজের দায়িত্বে রয়েছে রেলওয়ের লাকসাম আইডাব্লিউ। কোন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এসব তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা কাজ সম্পর্ণ করে আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করলে তখন আমরা আমাদের কাজ বুঝে নিবো। এছাড়া কারা কাজ করছেন, কি করছেন সে বিষয়ে লাকসাম আইডাব্লিউ বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর-লাকসামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসএসএ/ই ওয়াকর্স মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ রেললাইনের পাশে সম্প্রসারণ ও প্লাটফর্ম নির্মাণে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কাজটি করছে। রেলওয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে এ কাজটি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। যে কাজ হচ্ছে, তা নকশা অনুযায়ী হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। অতিবৃষ্টির কারণে পানি জমে এমনটি হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভেঙে যাওয়া স্থানের কাজটি করে দেবে বলে তিনি জানান।’
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১