chandpur times:
গৌরীপুরের রেলওয়ে সড়কের বেশিরভাগ রেলক্রসিংগুলো অরক্ষিত। এগুলোতে যানবাহন থামানোরা জন্য কোনো প্রতিবন্ধক নেই। কিছু ক্রসিংয়ে নামমাত্র প্রতিবন্ধক থাকলেও সেগুলো দেখার মতো কেউ নেই। অরক্ষিত এসব রেলক্রসিংগুলো যেনো এক একটা মরণফাঁদ।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলক্রসিংগুলোকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছে। এগুলো হলো স্বীকৃত ও অস্বীকৃত বা অবৈধ। রেলওয়ের অনুমোদিত ক্রসিংগুলোকে স্বীকৃত বলা হয়। আর সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়ক তৈরির সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে যে ক্রসিংয়ের সৃষ্টি করেছে, সেটাকেই অস্বীকৃত বলা হয়।
গৌরীপুর রেলসড়কের উপর স্বীকৃত ও অস্বীকৃত রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা জানার জন্য গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন যোগাযোগ করা হলে এর সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, গৌরীপুর-ভৈরব, গৌরীপুর-ময়মনসিংহ, গৌরীপুর-জারিয়া-মোহনগঞ্জ রেলসড়কে গৌরীপুর রেলওয়ের সীমানায় ছোট-বড় আনুমানিক প্রায় ৩০টির রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২টি রেলক্রসিংয়ে প্রহরী আছে। বাকি রেলক্রসিংগুলো অরক্ষিত।
উপজেলার অধিকাংশ অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সেরেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গৌরীপুর-ভৈরব রেলসড়কের পশ্চিম দাপুনিয়া, পূর্ব দাপুনিয়া, ভবানীপুর, বোকাইনগর, গৌরীপুর-ময়মনসিংহ রেলসড়কের শালীহর, বিসকা, গৌরীপুর-জারিয়া-মোহনগঞ্জ রেলসড়কের গজন্দর, কাউরাট নতুন বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কিছু সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। এসব সাইনবোর্ডের ভাষা অনেকটা এ রকম: ‘এখানে কোনো গেইটম্যান নাই। পথচারী ও সকল যানবাহন চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে নিজেই বাধ্য থাকিবেন’।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেলক্রসিংগুলো অরক্ষিত থাকার কারণে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত বছরের ২ নভেম্বর গৌরীপুর-ভৈরব রেলওয়ে সড়কের উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ট্রেন ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এলাকাবাসী এ দুর্ঘটনার জন্য অরক্ষিত রেলক্রসিংকেই দায়ী করেন।
গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতি কর্মদিবসে আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ২৮টি ট্রেন চলাচল করে। সে হিসাবে আধাঘণ্টা পরপর বিভিন্ন ট্রেন রেলওয়ে স্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু গৌরীপুর উপজেলার রেলওয়ে সীমানার মধ্যে মাত্র ২টি স্বীকৃত রেলক্রসিংয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রহরী রয়েছে। এরমধ্যে একটি রেলক্রসিং গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ২নং রেলওয়ে গেইট এলাকায় অবস্থিত। অপরটি গৌরীপুর-ভৈরব রেলওয়ে সড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত। নিয়ম অনুযায়ী ওই দুইটি রেলক্রসিংয়ে প্রত্যেকটিতে ৩ জন করে মোট ৬ জন লোকবল থাকার কথা। কিন্তু দুই রেলক্রসিংয়ে প্রত্যেকটিতে একজন করে মোট ২ জন প্রহরী আছে মাত্র। তবে এই দুই রেলক্রসিংয়ে কর্মরত দুই জন প্রহরীর কেউ সরকারি ভাবে নিয়োগপাপ্ত নয়। দৈনিক চুক্তিভিত্তিক তারা কাজ করে থাকেন।
প্রহরীদের একজন রঞ্জন চন্দ্রের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দুই বছর ধরে তিনি দৈনিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তার চাকরি এখনো সরকারিকরণ হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী এই রেলক্রসিংয়ে ৩ জন করে প্রহরী থাকার কথা। কিন্তু প্রহরী সঙ্কটের কারণে প্রায়ই তাকে নির্ধারিত সময়ের বেশি ডিউটি করতে হয়।
গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার এসএম তারেক জানান, সরকারের লোকবল সঙ্কটের কারণে গৌরীপুরের রেলক্রসিংগুলো অরক্ষিত। ভবিষ্যতে সরকার যদি পুনরায় রেলওয়ে লোকবল নিয়োগ করে তাহলে অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে প্রহরী নিয়োগ করা হবে। সূত্র- বাংলামেইল