চাঁদপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকেগুলো ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন এ ৬ মাসে ৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রবাসী থেকে ৮১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করেছে ।
সংশ্লিষ্ট চাঁদপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে রোববার ৪ জুলাই সকালে এ তথ্য মোবাইলে যোগাযোগ করে জানা গেছে ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে,সোনালী ব্যাংক ২০২১ সালের ৬ মাসে ১৮৬ কোটি টাকা,জনতা ব্যাংক ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স , অগ্রণী ব্যাংক ৩৫২ কোটি টাকা এবং দেশ কৃষি ব্যাংক ১৩১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করে ।
এ ছাড়াও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা লাভ করেছে । এর মধ্যে সোনালী ১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা,কৃষি ব্যাংক ৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা , জনতা ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং অগ্রণী ব্যাক ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা লাভ করেছে ।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের প্রবাসীদের শ্রমের বিনিময়ে পাঠানো রেমিটেন্স জেলার প্রায় দু’শতাধিক ব্যাংক শাখা ও কয়েক শ’শপিংমলে অর্থের তারল্য সৃষ্টি করছে । জেলায় প্রবাসীদের নিজ নিজ বাড়ি বা ভবন,ব্যবসা-বাণিজ্যে,শিক্ষা, কৃষি,স্ব-স্ব এলাকায় অবকাঠামোর উন্নয়ন,মসজিদ,মাদ্রাসা ও এতিমখানার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ক্ষেত্রে চিত্র পাল্টে দিয়েছে প্রবাসীদের বৈদেশিক র্যামিটেন্স ।
সম্প্রতি চাঁদপুর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর ২০২০-২০২১ এর তথ্যে জানা গেছে,পৃথিবীর ১৬২টি দেশে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬১ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীর বেলায় দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁদপুরের অবস্থান ৭ম ।
চাঁদপুরের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্র মতে,মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের বৈধ ৩ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমজীবী নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে তাদের নিকটতম স্বজনদের কাছে ব্যাংক ও অন্যান্য এজেন্সির মাধ্যমে র্যামিটেন্স প্রেরণ করেন। অবৈধ বা বিকাশ বা অন্যান্যভাবে রয়েছে আরো অসংখ্য র্যামিটেন্স অর্জন যার কোনো পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব। প্রায় ৫৫ লাখ প্রবাসী এখানে কাজ করছে । এর পরের স্থান হলো-কুয়েত,কাতার,
বাহরাইন,লেবানন,জর্ডান ও লিবিয়া। নদীমাতৃক চাঁদপুরের জন্য এটি একটি বিশাল প্রাপ্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাঁদপুরের প্রবাসীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলোতে শ্রম ব্যয় করছেন। মালয়েশিয়া,ইতালি,ফ্রান্স,সিংগাপুর,জাপান,দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের প্রবাসী কর্মজীবী রয়েছে। তাঁরাই এসব রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
চাঁদপুরের প্রবাসীরা প্রতি মাসে বিভিন্ন অর্থলগ্নী আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে এসব র্যামিটেন্স প্রেরণ করে থাকে । কোনো কোনো ব্যাংক কেবলমাত্র গোপন একটি পিন নাম্বারের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছেন। অনেক প্রবাসী গ্রাহক তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও অর্থ প্রেরণ করেন।
এদিকে চাঁদপুরের উত্তরা,রূপালী,ফার্মাস,মার্কেন্টাইল,প্রাইম,ডাচ-বাংলা,সিটি,ন্যাশানাল,ইউনাইটেড কমার্শিয়াল,ট্রাস্ট প্রভৃতি ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ লেনদেন করলেও চাঁদপুরে এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগীয় অফিস কুমিল্লা থাকায় এবং বিকাশ লেন-দেন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এ প্রতিবেদনে তা’ উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি বলে চাঁদপুর টাইমসের এ প্রতিবেদনে যুক্ত হয়নি।
প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্স দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক রেমিট্যান্স ডেস্ক ও হেলপ ডেস্ক আলাদাভাবে সেবা প্রদানের জন্যে খোলা হয়েছে। ব্যাংক শাখা এ ক্ষেত্রে সব্বোর্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর ।
প্রবাসীরা টাকা প্রেরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাংক তার গ্রাহককে কাংখিত অংকের টাকা প্রদান করতে সক্ষম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত বিভিন্ন অর্থলগ্নি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে ওই অর্থ প্রেরণ করেন।
চাঁদপুরের সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রাসঙ্গিক টেনে বলেন,‘প্রবাসীগণ যাতে বৈধভাবে তাদের কর্স্টার্জিত অর্থ বৈধ ভাবে দেশে টাকা পাঠায় সেজন্যেই সরকার ২% প্রনোদনা দি্চ্ছে। এতে ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়তেও সহায়তা করে।’
এ ব্যাপাবে অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক গীতা রাণী জানান,প্রবাসীদের পাঠানো তাদের অবস্থার উন্নতি ছাড়াও রেমিট্যান্স আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে । সরকার তাদের এ রেমিট্যান্স এর জন্যে ২% প্রণোদনা দিচ্ছে । অগ্রণী ব্যাংক আরোও ১% দিচ্ছে ।
আবদুল গনি , ৪ জুলাই ২০২১