Home / বিশেষ সংবাদ / রাস্তার রিকশা এখন রেস্তোরাঁয়!
রাস্তার রিকশা এখন রেস্তোরাঁয়!

রাস্তার রিকশা এখন রেস্তোরাঁয়!

রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই খানিকটা অবাক হতে হয়। রাস্তার রিকশা রেস্তোরাঁয় কেন? তা–ও আবার একটি টেবিলের দুই পাশে দুটি রিকশা মুখোমুখি। পাশের টেবিল ঘিরে আছে দোলনা।

একটু ভালো করে তাকাতেই ভুল ভাঙে। রিকশাগুলো আসলে চড়ার জন্য নয়, বসার জন্য। খাবার টেবিলের দুই পাশে রাখা হয়েছে চেয়ারের বিকল্প হিসেবে। রিকশাগুলোর চাকা নেই।

ব্যতিক্রমী এই অন্দরসজ্জার দেখা মেলে দক্ষিণ বনশ্রীর ‘অফবিট ফুড ফিউশন’ নামে একটি রেস্তোরাঁয়। প্রায় ৫৫০ বর্গফুট আয়তনের এ রেস্তোরাঁয় ৩০-৩৫ জন অনায়াসেই বসে খাবার খেতে পারবেন। ছোট এই রেস্তোরাঁয় মূলত পাওয়া যায় ফাস্ট ফুড ও চায়নিজ বিভিন্ন পদের খাবার। বিভিন্ন স্বাদের পাস্তা ও পিৎজা, বার্গার, শর্মা, সালাদ, স্যুপ, চাওমিন এবং সেট মেন্যু (ফ্রাইড রাইসসহ দুপুরের খাবার) মিলবে এই রেস্তোরাঁয়। বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি।

কেবল রিকশা নয়, দোলনায় মৃদু দোল খেতে খেতে খাবার খেতে পারবেন যে কেউ। দুটি টেবিল ঘিরে আছে চারটি দোলনা। ওপর থেকে মোটা রশি দিয়ে বাঁধা। আবার যাতে বেশি দোল না খায় সে জন্য মেঝে থেকে শিকল দিয়ে আটকানো রয়েছে।

রেস্তোরাঁটির চার উদ্যোক্তার মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ। এডলিন কুহু হোর, ইব্রাহীম খলিল, মোখলেসুর রহমান ও শারমিন মৌসুমী। তাঁরা সাবেক সহকর্মী ও বন্ধু। তাঁরা জানালেন, রেস্তোরাঁর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর অন্দরসজ্জা। ভিন্ন ধরনের অন্দরসজ্জার কারণেই লোকজন সেখানে খেতে যান।

উদ্যোক্তা ইব্রাহীম খলিল বলেন, যাঁরা খেতে আসেন তাঁদের মাঝে রিকশায় বসে খাওয়ার আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ, এ ধরনের ব্যতিক্রমী অন্দরসজ্জা সচরাচর দেখা যায় না। তিনি বলেন, দেশীয় ঐতিহ্যের রিকশা আর দোলনা এখানে খেতে আসা লোকজনের মনে প্রশান্তি এনে দেবে—এই ভাবনা থেকে ভিন্ন ধরনের অন্দরসজ্জা করেছেন তাঁরা।

এডলিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি জানালেন, ‘চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবছিলেন। বাকি তিন বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। পরে গেল ফেব্রুয়ারিতে রেস্তোরাঁটি চালু করি।’ তিনি বলেন, তরুণেরা ভিন্নতা খোঁজেন। তাঁদের আগ্রহের কথা ভেবে আরও অনেক রেস্তোরাঁর মতো এটি ফ্রি ওয়াই–ফাই জোন করা হয়েছে। তাঁরা খাবেন কিন্তু ছবি তুলবেন না, তা তো হয় না! সেসব কথা ভেবেই অন্দরসজ্জায় এই ভিন্নতা।

ছোট ভাইয়ের কাছে রেস্তোরাঁটির ব্যতিক্রমী অন্দরসজ্জা সম্পর্কে শুনে সেখানে খেতে যান দুই বন্ধু মুরশিদা ইয়াসমিন ও জুয়েনা আক্তার। তাঁদের আশাহত হতে হয়নি। বরং মুগ্ধতা বেড়েছে। মুরশিদা বলেন, ‘অফবিটের খাবারের মান ভালো। দামও ছিল সাধ্যের মধ্যে। তবে বসার ভিন্ন ডিজাইন মনে রাখার মতো।’

কেবল এক মাস বয়স হয়েছে অফবিটের। শুরুতেই বেশ সাড়া পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। মানুষ জেনে আসছেন, ফেসবুকে তাঁদের মন্তব্য জানাচ্ছেন। অনেক দূর থেকেও এখানে খেতে আসছেন। উদ্যোক্তাদের একজন বলেন, রেস্তোরাঁর ফেসবুক পেজে এক মাসের মধ্যেই ১০ হাজারের বেশি লাইক পেয়েছেন তাঁরা। রিভিউতে অনেকে লিখেছেন, অন্য এলাকাতেও এ ধরনের রেস্তোরাঁ চান তাঁরা। তাঁদের এখানে সাতজন কর্মী নিয়োগ করেছেন। সামনের দিনগুলোতে আরও সহযোগী নেওয়ার পরিকল্পনা তাঁদের।

যেসব তরুণেরা এ ব্যবসায় আসতে চান, তাঁদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে মত তাঁদের।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১: ০৫ পি .এম ২৯মার্চ,২০১৮বৃহস্পতিবার
এ.এস