দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে ল্যাভরভ প্রথম ঢাকায় এলেন।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাভরভকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি উপস্থিত ছিলেন।
সফরের শুরুর কর্মসূচিতে আজ সন্ধ্যায় ল্যাভরভ রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসবে। এক্ষেত্রে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক জোরদার, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিস্থিতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু থাকবে আলোচনার টেবিলে।
পাশাপাশি ইউক্রেন পরিস্থিতি, ভূ-রাজনীতি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি সহযোগিতা এবং রাশিয়া থেকে গম ও সার আমদানির বিষয়ে ঢাকা গুরুত্ব দেবে বলে মনে করছে সূত্রগুলো।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খাওয়ার টেবেলি মোমেন-ল্যাভরভ জাতিসংঘ, আঞ্চলিক ও অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামে সমর্থন ও সহেযাগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ইঙ্গেত রয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকা-মস্কোর মধ্যে কোনো চুক্তি হবে না। তবে দ্বিপক্ষীয় লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দুই দেশের মধ্যে ঝুলে থাকা চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ল্যাভরভ পরদিন শুক্রবার (৮ সেপ্টম্বব) সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা থেকে নয়া দিল্লির উদ্দেশে রওনা করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঢাকা-মস্কোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঝালাইসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ল্যাভরভের এ সফর রাজনৈতিক গুরত্ব অনেক বলে মনে করছেন ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, সব থেকেও রাশিয়া এখন অনেকটাই একা। রাশিয়া ইউরোপে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছিল, তা ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তলানিতে ঠেকেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রুশদের একা করে দিয়েছে। মস্কোর সঙ্গে ঢাকার যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, তা যেন অটুট থাকে এবং সামনের দিনেও বাংলাদেশ যেন দেশটির পাশে থাকে সেই বার্তা সংশ্লিষ্ট বৈঠকগুলো ল্যাভরভ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দায়িত্বশীল এক কূটনীতিকের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে রাশিয়া এখন অনেক বিছিন্ন হয়ে পড়ছে। ওই জায়গাতে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেটা অন্যান্য প্রভাবশালী পরাশক্তির কারণে যেন ঢাকার অবস্থান পরিবর্তন না হয়, সেটাই হয়তো মস্কোর চাওয়া থাকবে। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ কিন্তু পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে গেছে। আমরা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকছি। সেটা কিন্তু ঠিকই রাশিয়ার পক্ষে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বিষয় ল্যাভরভ তুলবেন বলে ইঙ্গিত রয়েছে। এক্ষেত্রে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মালামাল নিয়ে আসা রুশ যে পরিমাণ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে, তা গুরত্ব দিয়েই আলোচনায় তুলবেন ল্যাভরভ।
এ প্রসঙ্গ দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন, রাশিয়ার ইকোনোমিক অপারেটরস আছে। জাহাজ রুশদের একটি ইকোনোমিক অপারেটরস। রাশিয়া যে ৬৯টা জাহাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটা লিফট করার ব্যাপারে তারা বলতে পারে। তাদের যুক্তি হতে পারে ওটা দ্বিপক্ষীয় নিষেধাজ্ঞা, তা বাংলাদেশ কেন পালন করতে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কেন মানবে বাংলাদেশ, সেটাই হয়তো তাদের প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু এটার উত্তর আমাদের কাছে নাই।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্পর্কে যে টানাপোড়ন তৈরি হয়েছে তার একটি গুরত্বপূর্ণ কারণ মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা। আর মস্কোর দিক থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ায় বিপদ হয়েছে ঢাকার জন্য। কেননা, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিক পত্র পেয়ে রুশ জাহাজকে ফিরিয়ে দেয় ঢাকা। এক জাহাজকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মস্কো সম্পর্কে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা জোটের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ল্যাভরভের ঢাকা সফর বাতিল করে মস্কো।
টাইমস ডেস্ক/ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩