রম্য রচনা : ছাত্রীর কাছে শিক্ষকের ইন্টারভিউ

ক্যাম্পাসে নতুন এক রেডিও চ্যানেল খুলেছে, আমার মেয়ে স্টুডেন্টরা সেখানে চাকরি করে। সারাদিন নাকি সুরে কথা বলে আরজে সাজার চেষ্টা করে। এরপর নানান আজগুবি কথার ফাঁকে একটা দুইটা বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংলিশ, আরবি, হিব্রু সব গানের খিচুড়ি বাজায়, আর ছেলে স্টুডেন্টরা খবর পড়ে। বেশিরভাগই আবহাওয়ার সংবাদ, যার সাথে আবার ধানম-ির আবহাওয়ার কোনও মিল নাইৃ সব মিলিয়ে তুঘলকি কারবার।

“যার গলা যত সুন্দর, তার ওজন তত বেশি, তাই গলার আওয়াজ শুইনা প্রেমে পড়বি না” ছোটবেলায় এক বড় ভাই কথাটা বলছিলেন।
সেই কথাটা একদিন ফলে যাবে, বুঝি নাই। যেদিন বুঝলাম, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো রেডিওতে চেহারা দেখা যায় না। অনেক আগে একদিন ২০০৯ সালে কাওরান বাজারে এক রেডিওর স্টুডিওতে গিয়ে জনৈক “মহিলা সুমো কুস্তিগিরি” থুক্কু “আরজে” কে সামনা সামনি দেখে “রেডিওতে কাজ করা আরজে” থেকে দুরে থাকাই শ্রেয় বুঝার আক্কেল হওয়ার পর আমাকে আর রেডিওর আশে পাশে কেউ দেখে নাই।

আমার এক মহিলা স্টুডেন্ট (দুর থেকে দেখলে হিজাব ওয়ালা মহিলা গার্জিয়ান লাগে) একদিন আর কিছু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমার অফিসে হাজির। আবদার? তেমন কিছু না। “রেডিও খুইলাছেরে মউলা” থুক্কু “ক্যাম্পাস রেডিওতে” জাস্ট একটা ১ ঘণ্টার ইন্টারভিউ দিতে হবে। অনেক আজিব প্রশ্ন করবে আমাকে স্টুডেন্টরা আমাকে একটু মজা করে কথা বলতে হবে!

আমি বললাম, ওরে বাবা, ইম্পসিবল। এখন প্রশ্ন ফাঁসের যুগ। আন্দাজে প্রিপারেশন ছাড়া ধরা খামু নাকি? আগে স্যাম্পল প্রশ্ন দাও, এরপর চিন্তা ভাবনা করবো

আমার ছাত্রী, যার নাম “হানা”! (আমি ডাকতাম হানাদার) অত্যান্ত মিহি গলায় বলল, স্যার, প্রশ্ন গুলা খুবি সোজাৃআপনি এখনি অ্যানসার দিতে পারবেনৃকোন ভয় নাই শুনেই আর ডরাইয়া গেলাম। শেষমেষ রাজি হলাম।

আমি (শিক্ষক): বলো তোমার প্রশ্ন

ছাত্রীঃ আপনার প্রিয় রং?

আমিঃ ফর্সা !

পাশের ছাত্রীঃ অ্যা ! হে হে হে ৃ ওকে নেক্সটৃ

ছাত্রীঃ আপনার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব?

আমিঃ এক্স গার্ল ফ্রেন্ড !

পাশের ছাত্রীঃ অ্যা ! হি হি হি

ছাত্রীঃ আপনার প্রিয় শব্দ?

আমিঃ এটিএম বুথ থেকে টাকা বের হওয়ার শব্দ !

পাশের ছাত্রীঃ অ্যা ! হা হা হা

ছাত্রীঃ স্যার হে হে মানে কি বলেন এই সব? আপনে এইভাবে রেডিও তে কথা বললে আমার চাকরি যাবে

আমিঃ কোন কথাটা মিথ্যা বলছি বলো ? যেকোন ছেলেকে জিজ্ঞেস কর, আমার কথার সাথে মিলে যাবে সব ছেলের পছন্দ

ছাত্রীঃ আচ্ছা এবার অন্য প্রশ্ন, বলেন তো ছেলেরা কিভাবে ভালো রেজাল্ট করে জীবনে শাইন করতে পারবে?

আমিঃ খুব সোজা। ফেসবুক আর ভাইবার থেকে লগ অফ করে, ক্যাম্পাসের সামনে মোটরসাইকেলে বসা বাদ দিয়ে, ক্লাসের মেয়েদেরকে ফ্রাইড চিকেন না খাইয়ে ওই টাকা দিয়ে টেক্সট বই কিনে লাইব্রেরীতে বসে পড়ালেখা করলেই রেজাল্ট ভালো হবে

ছাত্রীঃ হে হে হেৃ তা স্যার মেয়েদের জীবনে শাইন করার জন্য কি করতে হবে?

আমিঃ (ওর লোমশ হাতের দিকে তাকিয়ে) দাড়ি, মোচ আর হাতের লোম শেভ করে , জিমে গিয়ে ওজন কমিয়ে, হিজাব খুলে দেশি সালওয়ার কামিজ পরে, ক্লাসমেটের এস এল আর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে, ফেসবুকে প্রোফাইল খুলে, বিদেশে থাকা বাঙ্গালি ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে পটিয়ে, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করলেই লাইফে শাইন করতে পারবে-ফেসবুক থেকে নেয়া

ডেস্ক : আপডেট বাংলাদেশ সময় ২:০৫ পিএম, ১৬ মে ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Share