Home / আন্তর্জাতিক / যে রহস্যময় গ্রামের সবাই শুধু ঘুমায়
man-sleeping-1

যে রহস্যময় গ্রামের সবাই শুধু ঘুমায়

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক :  আপডেট: ০২:২০  অপরাহ্ণ, ২৪ জুলাই ২০১৫, শুক্রবার

কাজাখস্তানে রয়েছে অদ্ভুত রহস্যময় একটি গ্রাম। রাজধানী ‍আস্তানা থেকে ২০০ মাইল দূরে কালাচি গ্রামের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো ধরনের মাদক ছাড়াই গ্রামবাসী ব্ল্যাক আউট হয়ে দিনভর ঘুমান। আর যখন তাদের ঘুম ভাঙে তখন এসবের কিছু মনে করতে পারেন না তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রোগের নাম ‘স্লিপিং সিকনেস’। তবে কি কারণে এত বড় পরিসরে এ রোগ হতে পারে তা নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা এবং দেশটির সরকার।

প্রাথমিকভাবে একদল গবেষক ধারণা করা করছেন, অতি মাত্রায় রেডিয়েশনের কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে অন্য একদল দাবি করছেন, এর কারণ হতে পারে কার্বন মোনোঅক্সাইড, রেডন বা ধাতব লবণ (হেভি মেটাল সল্ট)। যা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি হলে মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

গ্রামবাসীদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, গ্রামের পাশেই থাকা সোভিয়েতের পরিত্যক্ত ইউরেনিয়াম মাইনের (ক্রাসনোগোর্সকি মাইন) কারণে এমনটা হতে পারে।

সম্প্রতি কাজাখ সরকারের দেওয়া ঘোষণাতেও কারণ হিসেবে তাই বলা হয়েছে। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী বারদিবেগ সাপারাবাইভ দাবি করেন, তাদের গবেষকরা ইউরেনিয়াম মাইন থেকে উচ্চমাত্রার কার্বন ডাই অক্সাইড ও হাইড্রোকার্বন নিঃসরণের প্রমাণ পেয়েছে, যা স্লিপিং সিকনেসের কারণ।

মূলত যে কারণে ইউরেনিয়াম মাইন বন্ধ করা হয়, তার মধ্যে একটি হলো কার্বন মোনোঅক্সাইড। একইসঙ্গে ওই গ্রামের আকাশে অক্সিজেনের ঘাটতিও দেখা দিয়েছিল। এর প্রভাবে এত বড় পরিসরে এ রোগ দেখা দিতে পারে। তবে গবেষকদের এ মতামতে সন্তুষ্ট নন সাপারাবাইভ।

ওই গ্রামে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে এ সমস্যা ধরা পড়ে। যখন নারী-পুরুষ এমনকি তাদের পোষা প্রাণীও কোনো কারণ ছাড়াই রহস্যজনকভাবে দিন-রাত ঘুমাতে থাকে। বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি গাড়ি চালাতে চালাতেও।

গ্রামটির মোট জনসংখ্যা ৮১০ জন। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এ সমস্যায় ভোগেন ১৪০ জন। কেবল স্লিপিং সিকনেসই নয়, পর্যায়ক্রমে তাদের স্মৃতিক্ষয়, বমি বমি ভাব, তীব্র মাথা ব্যথাসহ নানা রোগ দেখা দেয়।

ওই গ্রামের বাসিন্দা জেলেনি ঝাবোরোনকোভা বলেন, এক শনিবার রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত তার বিড়ালকে মানুষের মতো নাক ডেকে ঘুমাতে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। আরও অবাক হন, কিছুই না খেয়ে দীর্ঘ সময় ঘুমাতে দেখে।

গত কয়েক বছরে কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের অন্য জায়গায় স্থানান্তর করার চেষ্টা করেন। তবে বিষয়টি অনেক কঠিন বলে দাবি করেছেন তারা। কেননা, পৈতৃক ভিটাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর জীবন ধারা গড়ে উঠেছে।

ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের পালমোনোলজিস্ট ক্লদ পিনতাদোসি বলেন, গ্রামবাসীদের এসব রোগের কারণ স্পষ্ট না। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতিই এর মূল কারণ। পরবর্তীতের ধারণা করা হয়, পুরাতন মাইনের প্রভাবে এমন হতে পারে। কারণ বাতাসে গ্যাস নিঃসরণ হওয়ার পরে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।

পরবর্তী গবেষণায় প্রকৃত কারণ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এটাই এ রহস্যের উত্তর, যোগ করেন তিনি।

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি