Thursday, 09 July, 2015 08:46:28 PM
চাঁদপুর টাইমস, ঢাকা:
দাফতরিক কাজে অনিয়মিত থাকার কারণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর পুনর্বণ্টন সংক্রান্ত এক আদেশ জারির মাধ্যমে তাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে।
অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও ‘সময়জ্ঞান’ না থাকায় এবং দাফতরিক কাজে ‘অবহেলা’ থাকায় সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে সরকার ও দলের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছিল। মহাজোট সরকার গঠন করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠতে থাকে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ভিন্নমত পোষন করেন। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ এবং শেখ হাসিনার মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণের কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই ছিল না। এখন হচ্ছে। এ কারণেই একজন মন্ত্রীর দফতর পরিবর্তনের ঘটনায় সবাই চমকে উঠছে। সরকার যা করছে, তা ইতিবাচক রাজনীতির জন্যই করছে।’
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুপস্থিত থাকায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন উঠে।
একনেক সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে একান্তে কথা বলায় এ গুঞ্জন আরও জোরদার হয়। সেই দিন একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য আটটি প্রকল্প তালিকায় প্রথমেই ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’।
কিন্তু স্থানীয় মন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় সভা মুলতবি করার অনুরোধ জানায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, মনে করেন আমিই মন্ত্রী। আলোচনা চালিয়ে যান।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, উনি যখন মিটিংয়ে আসেন না, আমি উনাকে সরিয়ে ( চেঞ্জ করে) দিচ্ছি’।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা এবং অনিয়মিতের অভিযোগ ওঠে ২০১১ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর। ওই সময় দলের অন্যান্য নেতারা তার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করলে তিনি জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকেন। বৈঠক শেষে নিজ থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তবে ১/১১-এর পর দলের প্রতি বিশেষ অবদান থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী ওই সময় আশরাফের সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
এরপর মহাজোট সরকারের আরও চার বছর কেটে গেছে। তবে গতি কমেছে সৈয়দ আশরাফের। দাফতরিক সভায় উপস্থিত না থাকা, দলীয় কর্মকাণ্ডে সময় না দেয়া, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা, টেলিফোন বা মোবাইল ফোন রিসিভ না করাসহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্য থেকেই। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একনেকের সভায় অনুপস্থিত থেকে এই অভিযোগের পাল্লা আরো ভারী করেছেন সৈয়দ আশরাফ। আর এসব কারণ বিবেচনায় এনেই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আশরাফ সাহেব তো চাঁন্দের বাতি। আমরাই তার সাক্ষাৎ পাই না। কর্মীরা পাবে ক্যামনে। প্রধানমন্ত্রী যা করেছেন, আমরা মনে করি, তা সময়োপযোগী।’
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাবিনেটের সদস্য পরিবর্তনের একক ক্ষমতা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। প্রধানমন্ত্রী যা ভালো মনে করেছেন, তাই সরকারের জন্য ভালো বলে মনে করি। যারা বিষয়টি নিয়ে বিশেষ সুবিধা নিতে চাইছেন, তারা মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সৈয়দ আশরাফের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবন করতে পারেননি।’
চাঁদপুর টাইমস : ডিএইচ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।