পাবনায় এক প্রেমিকের জন্য একসঙ্গে তিন বান্ধবী বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এক বান্ধবীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের চরসাহাদিয়ার গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু, ঠিক কি কারণে তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, তা নিয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই তিন ছাত্রী পরস্পর বন্ধবী। তারা তিন জনই ঈশ্বরদীর বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই তিন জনের মধ্যে শনিবার (২৮ জুলাই) সকালে বর্ষা খাতুন নামে এক ছাত্রী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
নিহত বর্ষা খাতুন পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের চরসাহাদিয়ার গ্রামের কবি শেখের মেয়ে। বর্ষার বাবা কবি শেখ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী অন্য দু’জন হলো- চরসাহাদিয়ার গ্রামের কুবের দাসের মেয়ে সঙ্গীতা দাস (১৪) ও তালেব হোসেনের মেয়ে ববিতা খাতুন (১৪)। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এক প্রেমিকের সঙ্গে তিন বান্ধবীর প্রেম। প্রেমিক উধাও হওয়ার খবর পেয়ে অভিমানে তারা তিন বান্ধবী একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষায় দুটি বিষয়ের খারাপ করায় পরিবারের লোকজনের ভয়ে ও লজ্জায় তারা আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চরসাহাদিয়ার মাঠের মধ্যে ববিতা, বর্ষা ও সঞ্চিতা একসঙ্গে কীটনাশক ওষুধ খেয়ে গোঙড়াতে থাকে। এ সময় মাঠের লোকজন শব্দ শুনে এগিয়ে যায়। এরপর তাদের উদ্ধার করে দাপুনিয়া বাজারের পল্লী চিকিৎসক আব্দুস সালামের কাছে নিয়ে তারা।
পল্লী চিকিৎসক আব্দুস সালাম বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় তিনজনের বিষ পেট থেকে বের করা হয়। কিন্তু, বর্ষার অবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রুত তাকে পরিবারের লোকজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুনেছি রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা গেছে। অপরদিকে, সঞ্চিতার অবস্থা কিছুটা খারাপ হওয়ায় তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর ববিতা বিষমুক্ত হওয়ায় তাকে পরিবারের লোকজন বাসায় নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বিষপান করা তিন বান্ধবীর মুখ থেকে জেনেছেন- পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ায় পরিবারের লোকজনের ভয়ে এবং লজ্জায় তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একসঙ্গে বিষপান করেছে।
এ ঘটনার বিষয়ে বাঁশেরবাদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলামের কাছে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবেমাত্র অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শিক্ষকরা খাতা দেখছেন, এখনো কোনো ফলাফল প্রকাশ হয়নি। এমনকি পরীক্ষার মূল্যায়িত কোনো খাতাও কোনো শিক্ষার্থীকে এখন পর্যন্ত দেখানো হয়নি।
এ বিষয়ে দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ঠান্ডু বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি- মেয়ে তিনটি একটি ছেলের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে প্রেম করে আসছিল। হঠাৎ ছেলেটি উধাও হয়ে যায়। এ কারণেই এই তিন স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষপান করেছিল বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছেন।
এ ব্যাপারে পাবনা সদর থানার ওসি মো: ওবায়েদুল হক জানান, চাঞ্চল্যকর এ খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিজ্ঞান ও অঙ্ক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার জন্য তারা বিষপান করেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রেম সংক্রান্ত বিষয় কিছু জানায়নি তারা। তাই এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না বলে জানান ওসি মো: ওবায়েদুল হক।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur