Home / জাতীয় / `মোটরসাইকেল নিষিদ্ধে বহু মানুষের ভোগান্তি বাড়বে’
মোটরসাইকেল

`মোটরসাইকেল নিষিদ্ধে বহু মানুষের ভোগান্তি বাড়বে’

ইদুল ফিতর ও এর আগে-পরে সাত দিনের জন্য মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বহু মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। বেসরকারি এই সংস্থা এক বিবৃতিতে বলছে, মোটরসাইকেল ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন হলেও পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলার কারণেই এর ওপর মানুষের এক ধরনের নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। আচমকা ইদযাত্রায় মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেওয়া ভোগান্তির কারণ হবে অনেকের জন্য।

৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন এবং দূরের যাত্রায় এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। তা সত্ত্বেও মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে কাছের ও দূরের যাত্রায়। মূলত অসহনীয় যানজট, গণপরিবহন সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও জনবান্ধব না হওয়ার কারণে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল।

তারা বলেন, অধিকাংশ মহাসড়কে মোটরসাইকেলসহ স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড নির্মাণ না করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো মহাসড়কের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মহাসড়ককে পুরোপুরি এড়িয়ে মোটরসাইকেলের পক্ষে গন্তব্যে পৌঁছানোর তেমন কোনো সুযোগ নেই। এদিকে, সরকার গণপরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। বেসরকারি বাস মালিকদের অযৌক্তিক বিরোধিতার মুখে বিআরটিসি বাসের সেবা উন্নত ও বিস্তৃত করছে না। এই বাস্তবতায় মানুষের সামনে মোটরসাইকেলও গণপরিবহন হয়ে উঠেছে। মোটরসাইকেল কখনো গণপরিবহন কিংবা গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এটি হয়েছে।

ইদযাত্রায় মোটরসাইকেলের ব্যবহার প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু মানুষ সবসময়ই মোটরসাইকেলে ইদযাত্রা করেছে। তবে গত ইদুল ফিতরে এটি চরম আকার ধারণ করে। তাতে দুর্ঘটনাও বাড়ে। সে কারণে এবার সরকার মহাসড়কে মোটরসাইকেল পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইদে বিপুল সংখ্যক ঘরমুখো মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসম্মত গণপরিবহন নেই। তবু মানুষ যেকোনোভাবে আপনজনের টানে বাড়ি যেতে চাইবে। মানুষের এই আবেগকে পুঁজি করে বহু অসাধু পরিবহন মালিক তাদের ভাঙাচোরা পরিবহন রাস্তায় নামাবেন এবং অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করবেন। এতে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ হতাহত হয়, তার চেয়ে বাস দুর্ঘটনায় বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তারা আরও বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর সুযোগ রাখার কারণে অনৈতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরির আশঙ্কাও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা ইদযাত্রায় কেবল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকদের নিরাপদ গতিসীমায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি না করলে ইদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

অধ্যাপক মাহবুব ও সাইদুর রহমান আরও বলেন, আমরা মনে করি— একটি টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে ক্রমান্বয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে। একইসঙ্গে কিশোর-তরুণরা যেন মোটরসাইকেল চালাতে না পারে, সেজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতসহ পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।