মেহেদি হাসান মিরাজ আসলে তার মতোই। কারও তুলনায় যাওয়া ঠিক হবে না। সমসাময়িক ক্রিকেটারদের ভেতরে লিটন দাস, সৌম্য সরকার কিংবা মোস্তাফিজদের সঙ্গে সেভাবে তুলনা করলে হয়তো মিরাজকে তুলনামুলক ম্লানই মনে হবে।
লিটন-সৌম্যর মতো ‘এক্সাইটিং’ ক্রিকেটার তিনি নন। দুজনের ব্যাটে যে আকর্ষণীয়, বিধ্বংসী রুপ আছে সেটা তার নেই। থাকারও কথা নয়। কারণ লিটন-সৌম্য দুজনই মূলত ব্যাটসম্যান। লিটন কিপিংও করেন। সৌম্যও এখন প্রায় বোলার হয়ে উঠেছেন। আর সেখানে মিরাজ একজন অফস্পিনার, যিনি ব্যাটিংটাও পারেন।
একইভাবে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ যেভাবে বল হাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলেন, চার বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় টেস্ট অভিষেকের পরও মিরাজ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি।
অথচ শুরু দেখে মনে হয়েছিল, তেজি রেসের ঘোড়া, যাবেন বহু দূর। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকে সাত উইকেট (৬/৮০, ১/৫৮) পাওয়ার ঠিক পরের ম্যাচেই শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে স্পিন জাদুতে বশ করেন ইংলিশদের।
সেই ম্যাচে ১৫৯ রানে ১২ উইকেট (৬/৮২ ও ৬/৭৭) শিকার করে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের নায়কও বনে যান এ অফস্পিনার। কিন্তু পরবর্তীতে সাফল্যের সে ফলগুধারা বয়নি। ২২ টেস্টে সাতবার ৫ উইকেট ও দুইবার ম্যাচে ১০ বা তার বেশি উইকেট শিকারি মিরাজের টেস্ট উইকেট ৯০টি।
সে তুলনায় সীমিত ওভারের ফরম্যাট তথা ওয়ানডে (৪১ ম্যাচে ৪০ উইকেট) আর টি-টোয়েন্টিতে (১৩ খেলায় উইকেট ৪টি) বোলিংটা তত কার্যকর না। তারপরও নিচের দিকে ব্যাট হাতে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে।
সব মিলে পারফরমার মিরাজ অনেকের পছন্দের। জাতীয় দলের কনিষ্ঠ ক্রিকেটারদের মধ্যে এখনও মিরাজ খুব ভাল অপশন। অফস্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও পারেন। সবমিলে একটা মোটামুটি কমপ্লিট প্যাকেজ ভাবা হয় তাকে।
সঙ্গে ক্যাপ্টেন্সি ম্যাটেরিয়ালও আছে। ২০১৬ সালে যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেবার ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে হয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। তখন থেকেই কেউ কেউ তাকে ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবেও কল্পনা করেন।
ভক্তরা শুনে খুশি হবেন, মেহেদি হাসান মিরাজ নিজেও জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভ নট আউট নোমানে কথা বলতে এসে মিরাজ জানিয়েছেন, তিনিও স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার।
সঞ্চালক নোমান প্রশ্ন করেন জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন? কবে নাগাদ অধিনায়ক হওয়ার আশা করেন? জবাব মিরাজ বুঝিয়ে দেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন। তারও আশা আছে জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার। তবে এখনই সে স্বপ্নে বিভোর নন।
মিরাজ বলেন, ‘আমি তো বলতে পারছি না। আল্লাহ যখন রহম করবেন তখনই হবো ইনশাল্লাহ। তারপরও ধরেন ৫ বছর।’
জাতীয় দলের অধিনায়ক হতে বয়স কোন বড় বাধা কি না? জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, ‘আসল বিষয় হচ্ছে ম্যাচিউরিটি। যথাযথ পরিপক্ব হওয়া খুব জরুরি। ম্যাচিউরড হয়ে তবেই জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া খুব জরুরি। ম্যাচিউর না হলে দায়িত্বটা বোঝা যায় না।’ আরো পড়ুন- আলোচিত মিরাজের হাতে খড়ি যাঁর কাছ থেকে
বার্তা কক্ষ, ১৪ জুন ২০২০