চাঁদপুর সদর উপজেলা সবচেয়ে অবহেলিত প্রত্যন্ত এলাকা চরমুকন্দি কোম্পানীর চর গ্রাম। মেঘনার নদীর পশ্চিম পাড়স্থ ১১নং ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নে প্রায় পাঁচশত পরিবারের বসতী এই চরে কোনো স্কুল কিংবা মাদ্রাসা ছিলো না।
ফলে এখানকার দরিদ্র ছেলেমেয়েরা প্রায় ৪ মাইলের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাশ্ববর্তি শরীয়তপুর জেলায় গিয়ে লেখাপড়া করতে হতো। খাল-বিলের এতোটা পধ পাড়ি দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এজন্য তাদের জ্ঞানার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো স্থানীয় মসজিদের মক্তব। এতোকাল মক্তবেই তারা লেখাপড়া করতো। চরের এই সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চাঁদপুরের ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হাজী সেকান্দর কোম্পানি নিজের দানকৃত ২০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন হাজী সেকান্দর কোম্পানী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মঙ্গলবার ৯ জানুয়ারি শীতের সকালে প্রত্যন্ত চরে পুষ্পিত এই ‘আলোর ফুলের’ পথচলা শুরু হয়। স্থানীয় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসে ‘আপনার সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে স্কুলে ভর্তি করান, আমাদের স্কুলের ভর্তি শুরু হয়েছে। মসজিদের মাইকে এমন ঘোষণা শোনার সাথে সাথে প্রথম দিনেই স্কুলে ভর্তি হয় প্রায় ১শ’ ২০জন কচি-কাচা শিক্ষার্থী।
পরে উৎসবমুখর পরিবেশে শিশু-শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক ও স্থানীয় মুরব্বিরা। হাতে নতুন বই এবং মিস্টি পেয়ে খুশিতে নেচে উঠে শহর কিংবা উন্নত গ্রামের সুবিধা বঞ্চি নিস্পাপ শিশুগুলো।
এসময় বিদ্যালয় আঙিনায় উপস্থিত স্থানীয় জেলে, কৃষকসহ খেটে খাওয়া অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের হাতে নতুন বই দেখে চোখে-মুখে খুশির চিত্র আঁকেন। বেলা ১১টায় মিলাদ ও দোয়ার মধ্যদিয়ে বিদ্যালয়টি পথচলার কার্যক্রম শুরু হয়।
বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা হাজী সেকান্দর কোম্পানি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলায় অন্তভূক্ত হলেও এই গ্রামটি মেঘনার নদীর পশ্চিমে প্রত্যন্ত চর এলাকায় অবস্থিত। এখানে কোনো স্কুল-মাদ্রাসা না থাকায় ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া করতে বহু বেগ পোহাতো। আমি চাই এই গ্রামের সকল ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করুক। কারণ তারা শিক্ষিত হলেই একটি সুন্দর ও শিক্ষিত সমাজ গড়ে উঠবে।
তিনি আরো জানান, ব্যক্তিগত অর্থ এবং নিজের দানকৃত ২০ শতাংশ জমির উপর টিনশেডের এ বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছি। এখন এ এলাকার সকল বাবা-মায়ের প্রতি আমার অনুরোধ থাকতে তারা যেনো সন্তানদের স্কুলে পাঠায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মকবুল হোসেন মাস্টার জানান, এই বিদ্যালয়টি প্রত্যন্ত চর এলাকায় যেনো একটি ‘আলোর ফুল’। আজ থেকে এখানকার ছেলেমেয়েরা এই আলোর ফুল থেকে জ্ঞানার্জন করে নিজেরা আলোকিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টি সচল রাখতে হলে সাহায্য এবং সহযোগিতা দুটোরই প্রয়োজন আছে। এর প্রতিষ্ঠাতা অর্থ সাহায্য করবে কিন্তু সহযোগিতা করতে হবে এলাকার সকলকে। সবাই সহযোগিতা করলেই বিদ্যালয়টি বেঁচে থাকবে এবং এখানের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।
আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৩ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার
ডিএইচ