চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত চাঁদপুর সেতুতে টোল আদায় চলছেই। অনেক সাংসদ, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিই কথা দিয়েছিলেন এই সেতুর টোল আদায় বন্ধ হবে।
কেউ কথা রাখেনি। দীর্ঘ এক যুগ পার হয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সেতুর টোল আদায়।
প্রায় একই সময়ে নির্মিত তিনটি সেতুর মধ্যে দুটি সেতুর টোল আদায় এরই বন্ধ হলেও চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ(সওজ)-এর বিরুদ্ধে দ্বৈত নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর উপর তিনটি সেতুর মধ্যে দুটির টোল আদায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে। শুধু বন্ধ হয়নি ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের চাঁদপুর অংশে অবস্থিত চাঁদপুর সেতুর টোল। জনগণের অভিযোগ টোল আদায়ের ক্ষেত্রে সওজ দৈত নীতি অবলম্বন করেছে।
এসর্ম্পকে রোববার (২২ আক্টোবর) চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর(সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ্রত দত্ত জানান, এই মুহূর্তে চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের কোন সম্ভাবনা নেই।
তবে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল (রোববার ১৫ অক্টোবর) জেলা প্রশাসনের মাসিক উন্নয়ন সভায় চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সেতুর টোল আদায় বন্ধে আসন্ন জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রস্তাব তোলেন,
ওই সভায় জেলা আ’লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ টোল আদায় বন্ধের দাবি জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ ব্রিজের টোল আদায় বন্ধ করতে হবে। টোলের নামে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে সেতুর টোল আদায় বন্ধে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গকে স্বারকলিপি প্রদানসহ অনুনয় বিনয় করা হলেও টোল আদায় বন্ধ হয়নি। টোল আদায় বন্ধের জন্য ফরিদগঞ্জের সাংসদ ড. মোহাম্মম শামছুল হক ভূঁইয়া জোরালোভাবে সংসদে বিষয়টি উথাপন করেন। ভুক্তোভোগী জনগণ বাধ্য হয়ে সড়কে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর, বিক্ষোভ সমাবেশ করলে ও সরকার টোল আদায় বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি।
সওজ বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৭০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রতি বছর সওজ কর্তৃপক্ষ সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দিয়ে আসছে। অথচ একই সময় নির্মিত তিনটি সেতুর মধ্যে চাঁদপুর পুরান বাজার-নতুন বাজার সেতু ও হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সেতুর টোল আদায় বেশ কয়েক বছর পূর্বেই বন্ধ করা হয়। সেতু নির্মানের পর দীর্ঘ ১২ বছর ফেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়নি চাঁদপুর সেতুর টোল। ফলে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার জনগণকে যানবাহনের অতিরিক্ত টোলের বোজা টানতে হচ্ছে। অপরদিকে টোল দেওয়ার জন্য যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীদের অতিরিক্ত বাড়া আদায় নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে নিয়মিত বাদানুবাদ হচ্ছে।
সেতুটির টোল আদায় বন্ধের জন্য সাবেক পররাষ্ট মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় এমপি ড. শামছুল হক ভুইয়, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আবু ওসমান চৌধুরীর কাছে স্বারকলিপি দেন ফরিদগঞ্জ বাসমালিক সমতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রাজা। এছাড়া বাসদসহ একাধিক সংগঠন একাধিক বার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে।
একটি সূত্র জানায়, চাঁদপুরে সরকারি দলের প্রভাবশালী লোকজনের তদ্বিরের কারণে এই সেতুর টোল আদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না। চাঁদপুরের স্থানীয় রাজনৈতিদের একটি কুচক্রিমহল নিজেদের স্বার্থে সওজের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে এই সেতুর টোল বন্ধ করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
২০০৯ সালে আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সেতুর টোল আদায় বন্ধ হবে বলে মানুষ আশায় বুক বাঁধলেও সরকার জনগণের এই প্রাণের দাবীর প্রতি কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না।
চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বাস মালিক সমিতির নেতা আব্দুর রাজ্জাক রাজা। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের জন্য সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় এমপি ড. শামছুল হক ভুইয়া, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আবু ওসমান চৌধুরীর কাছে স্বারকলিপি দিয়ে ছিলাম। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ টোল বন্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর দিয়েছে। এমনকি সেতুর উপর মানববন্ধন করা হয়েছিলো। কিন্তু টোল বন্ধ হয়নি। আমি টোল বন্ধের জন্য সরকারের প্রত্বি আহ্বান জানাচ্ছি। এই সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী সকল শ্রেণি পেশার মানুষের দাবি চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সেতুকে অতিদ্রুত টোল মুক্ত করে জনসাধারণকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।
এ সেতু সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন-
প্রতিবেদক-আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ ৭:০৩ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ রোববার
ডিএইচ