চাঁদপুর

মেঘনার জোয়ারের পানিতে চাঁদপুরে দেড় সহস্রাধিক বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

চাঁদপুরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদীর পানি ও স্রোতধারাও কিছুটা কমেছে। বুধবার সন্ধ্যায় নদীর পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা সর্বোচ্চ ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে নদীর পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভাটার টানে বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে পানি কমতে শুরু করে। বিশেষ করে চাঁদপুর শহরের রাস্তাঘাটের পানি নেমে যায়। সন্ধ্যায় আবার পানি বাড়তে শুরু করে। তবে তা বৃদ্ধির হার আগের দিনের মতো ছিল না।

বুধবার বিকেল থেকে হঠাৎ করে পানি বেড়ে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা, চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো ও হাইমচর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন।

জোয়ারের পানিতে ওইসব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চরাঞ্চলের লোকজন কোন উপায় না পেয়ে মাচা বেঁধে অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, হাইমচরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ অস্থায়ী বাঁধের দু’টি স্থান ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে। পূর্ণিমার প্রভাব দু’দিন আগে কেটে গেলেও হঠাৎ বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণা বাতাস বইতে থাকে। এতে ফুলে-ফেঁপে ওঠে চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাইমচরের মহাজমপুর, চরভাঙ্গা সাবু মাস্টার মোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে সেচ প্রকল্প এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। ভাঙন এলাকা বাঁধ নির্মাণে আমরা জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

গত বুধবার বিকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লঞ্চঘাট, হরিণা ফেরিঘাট, শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, নাজিরপাড়া, রহমতপুর কলোনী, নিউ ট্রাক রোড, আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, কোড়ালিয়া রোড, যমুনা রোড, মাদ্রাসা রোড, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ সড়ক, হাফেজিয়া মাদ্রাসা সড়ক, মৈশাবাড়ী রয়েজ রোড, নিতাইগঞ্জ সড়ক, মধ্য শ্রীরামদী, পশ্চিম শ্রীরামদী, সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন, হানারচর ইউনিয়ন ও চান্দ্রা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।

এছাড়া রাস্তার উপর দিয়ে পানি উঠে প্লাবিত হয়েছে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী, হাইমচর সদর ও নীলকমল ইউনিয়নের ৩ হাজার মানুষের বসতঘর। তাছাড়া উপজেলার মহজমপুর, চরভাঙ্গা এলাকায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সেচ প্রকল্প এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

বেড়ি বাঁধের বাইরে থাকা ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি, ঝিল, পুকুর, সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে করে এই এলাকার ৫ শতাধিক পানের বরজ ও ১ হাজার মাছের পুকুর ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম খান জানান, ওই ইউনিয়নের ৪ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এতে করে চরফতেজংপুর ও ইব্রাহীমপুর গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি।

চাঁদপুরের সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, তার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে চিরাচ্চর, রায়েরচর, গোয়ালনগর, বরিয়ারচর, মুগাদি, বাঁশগাড়ি, চরসুরেশ এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাড়িগুলো এবং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টিও পানিতে তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই লোকজন এখন মাচাবেধে অবস্থান করছেন।

হাইমচর উপজেলার মহজমপুর গ্রামের সাহেব আলী, সোহাগ গাজী, দুলাল মিয়া, ইয়াছিন মিজি, ছালেহ আহমদ জানান, বিকেল থেকে হঠাৎ করে প্রচন্ড গতিতে পানি বাড়ি ঘরে প্রবেশ করে। ঘরের মধ্যে এখন তারা পানিবন্দি। তাদের গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পানির মধ্যে রয়েছে বলে জানান তারা।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী জানান, উপজেলার ডেলেরবাজার থেকে শুরু করে চরভৈরবী পর্যন্ত সড়কের মহজমপুর ও পুরাতন হাইমচর সড়কের দু’টি ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

এতে করে মহজমপুর, চরকৃষ্ণপুর, নয়ানী, লামচরী, দক্ষিণ চরভৈরবী, গাজীনগর, নতুন বাজারসহ আশপাশেল এলাকার বাড়িঘর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তার উপরে দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কয়েক এলাকায় বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দেড় সহস্রাধিক ঘর-বাড়িতে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন সার্বিক খোঁজখবর রাখছে।

স্টাফ করেসপন্ডেট,৭ আগস্ট ২০২০

Share