তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তাই যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন! মুক্তিযোদ্ধার দাপট দেখিয়ে হেন কাজ নেই যা তিনি করেননি অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. আবুল হাসেম। যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জন এবং সম্মানে আঘাত হেনেছেন। সর্বশেষ পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরেরদিন তিনি প্রতিবন্ধী মুয়াজ্জিন শাহালীকে মারধর করেন। নির্যাতনের শিকার মুয়াজ্জিন মো. শাহালী থানায় একটি অভিযোগ করেন।
অপরদিকে নিজের সম্পত্তি বেদখলকারীরা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান অভিযুক্তকারী। ঈদের দিনের ঘটনায় আবুল হাসেমও অভিযোগ করেন থানায়।
মো. শাহালীর লিখিত অভিযোগপত্র এবং সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের খুরুমখালী গ্রামের মো. আবুল হাসেম ঈদের নামাজের পর নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দকে জামায়াত-শিবির বলে অপবাদ দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের বাজে কথা বলতে থাকে।
এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি শান্ত করতে মুয়াজ্জিন মো. শাহালী তাকে সবার সামনে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি তার ওপর ক্ষেপে যান এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।
পরদিন শাহালী কমিটির সহ-সভাপতি আল আমিনের কাছে গেলে আবুল হাসেম ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম তাকে গালিগালাজ করে এবং একপর্যায়ে তাকে কিল, ঘুষি, লাথি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরবর্তীতে শাহালীর লোকজন ওই বাড়িতে এলে আবুল হাসেম গংরা বাসার গেট বন্ধ করে ভিতরে থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে সবাই বেঁচে যায়।
এ বিষয়ে মুয়াজ্জিন প্রতিবন্ধী মো. শাহালী বলেন, ‘ঘটনার দিন আবুল হাসেম পথে আমাকে একা পেয়ে তার হাতে থাকা রড দিয়ে মাথায় আঘাত করতে গেলে আমি হাত দিয়ে থামাতে গেলে আমার হাতে লেগে জখম হয়। উনি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন। আমি আমার নিরাপত্তা এবং ঘটনার প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ করি।’
উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আবুল হোসেন মুক্তিযোদ্ধার দাপট দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন। উনি একজন প্রতারক, অত্যাচারী, জুলুমবাজ। উনি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অন্যায়মূলক কার্যকলাপ করে। সে যখন-তখন সাধারণ মানুষকে মারধর করে। মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন একক রাজত্ব কায়েম করে আসছে। সাধারণ মানুষের জমি দখল, মানুষের চলাচলের রাস্তা কেটে জনদুর্ভোগের মতো ন্যাক্কারজনক কাজ তিনি করেছেন। রাস্তায় খুঁটি দিয়ে চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। তার অত্যাচারে এলাকায় সাধারণ মানুষের শান্তিময় বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে তার এসব কর্মকান্ডে লজ্জিত।’
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি গণস্বাক্ষর নিয়েছেন। এসময় এলাকাবাসী বলেন, ‘পুরান বাড়িতে প্রায় ৫০টি পরিবারের একমাত্র রাস্তাটি ব্যবহার করতে বাধা সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাস্তার পাশে খুঁটি দিয়ে এবং রাস্তা কেটে দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবুল হাসেম বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি একজনের কাছে শুনেছি এখানে জামাত-শিবির আছে তাই বলতে গিয়ে সবার বাধার মুখে পড়েছি। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। আমাকেসহ মসজিদের ভিতর থাকা সবাইকে তালা মেরে রেখেছে। আমাকে বলা হচ্ছে ইমামের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাস্তা আমার, তারা জোর করে ব্যবহার করছে। এই মসজিদের জায়গাও আমরা দান করেছি। ১৯৯৫ সালে আমি বাটোয়ারা মামলা করেছি। তাই পুরান বাড়ির সবাই জোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। দোয়া করেন আমি মামলায় জিতলে রাস্তা কেটে ফেলবো।’
ঈদের দিন এবং তার পরেরদিন তার বাড়িতে মারামারির ঘটনায় আবুল হাসেম ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। দুই অভিযোগের আলোকে পুলিশ তদন্ত করছে।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভূমিদাতার উত্তরসূরী আনিছুর রহমান কবির বলেন, ‘আবুল হাসেম যা বলেছেন তা সত্য নয়। আমার মা মেহেরুননেছা মসজিদের জায়গাটি ওয়াকফ করেন। পুরান বাড়ির রাস্তাটিও আমাদের। আমরাই রাস্তাটি ব্যবহারের জন্য দিয়েছি।’
ফরিদগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শহীদুল্লাহ তপাদার এ বিষয়ে বলেন, ‘তাদের জাগায় জমি নিয়ে মামলা আছে জানি, কিন্তু তিনি মসজিদের মুয়াজ্জিনকে মেরেছে এটা জানি না। কেউ আমাকে বলেনি।’
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, ‘এরকম অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রতিবেদকঃশিমুল হাছান,১৯ মে ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur