দোকান হলো মুদি পণ্যের। সাথে বিক্রি করছেন মুরগী। আবার দেখা যাচ্ছে দোকান হলো ইলেকট্রিক পণ্য অথবা হার্ডওয়্যারের কিন্তু সাথে আছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার। এ যেন কৃষকের সাথী ফসল অথবা পাহাড়ীদের জুম চাষ। একটার সাথে আরেকটা মোটেও যায় না, এমন হ-য-ব-র-ল দোকান খুলে বসেছেন কিছু ব্যবসায়ী।
এমন চিত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলার সবখানে। অধিকাংশ বিক্রেতার নেই নির্দিষ্ট আইটেমের লাইসেন্স। দেখা যাচ্ছে লাইসেন্স নিয়েছেন এক আইটেমের বিক্রি করছেন অন্য আইটেম। যারা মূল ব্যবসার পাশাপাশি (একই দোকানে) অন্য ব্যবসা করছেন, বিশেষ করে যারা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার বিক্রি করছেন এদের অধিকাংশের নেই কোনো বিস্ফোরক লাইসেন্স। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি নেই।
আরো ভয়ঙ্কর চিত্র হলো, কোনো কোনো দোকানে গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের মতো জ্বালানি।
নিয়ম অনুযায়ী এলপি গ্যাস ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাত করতে হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীকে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ গ্যাস সিলিন্ডার বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ করতে হবে। তবে এসব নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা করছেন না বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাউকে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি।
এটা যেমন অনিয়ম এবং অপরাদ ঠিক তেমনি মুদি দোকানে মুরগি বিক্রি করাও অনিয়ম। এতে স্বাস্থ এবং দানাদার ও অন্যান্য পণ্যের ক্ষতি হয় বলে এটাও অপরাদ। অথচ সবাই ভোক্তার অধিকার লগ্ন করে যাচ্ছেন নির্বিগ্নে। মুদি দোকানে থাকে খোলা আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, চালসহ অনেক পণ্য। পাশেই যদি মুরগী বিক্রি করা হয়, তাহলে সেখানে থাকা মুরগীর লিটার এবং শুকনো ময়লা বাতাসের সাথে উড়ে গিয়ে সে সব খাবার আইটেমের মধ্যে পড়ে। নিঃসন্দেহে এটা একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর বাজারে এরকম একাধিক দোকান রয়েছে। উপজেলার বাহিরের বাজারগুলোতে এবং পাড়ায় পাড়ায় এমন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফরিদগঞ্জ বাজারের কাঠ পট্টিতে এরকম একটি দোকান রয়েছে। যে দোকানের কোনো সাইনবোর্ড নেই, নেই কোনো নাম। তবে যিনি দোকানী তার নাম লিটন। যিনি একই দোকানে মুরগীও বিক্রি করছেন আবার মুদি পণ্যও বিক্রি করছেন। এর আগে এই দোকানে আরো তিনজন ব্যবসা করেছেন। এরা হলেন- মামুন, ইয়াছিন এবং আল আমিন। তিনজনই শুধু মুরগী বিক্রি করেছেন। বর্তমানে যিনি দোকান পরিচালনা করছেন তিনি লিটন। আল আমিন তার কাছে বিক্রি করেছেন। লিটন মুরগীর সাথে মুদি পণ্যও যোগ করেছেন। বিক্রি করছেন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। তিনি কোনো ধরনের লাইসেন্সই করেননি।
পাশের দোকানদাররা ‘কেন লাইসেন্স করেনি’, জানতে চাইলে তিনি বলেন-‘আমি মেয়রের সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন লাগবে না।’
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই শুধু মুরগী বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। তাই সাথে মুদি পণ্যও বিক্রি করছি।’
রাবেয়া নামের একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য বিক্রি করছে। অথচ তাদের নজরে আসছে না। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক।
ফরিদগঞ্জ বাজারের মাছ বাজার, কাঁচা বাজার, বাসস্ট্যান্ডসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকম বেশ কয়েকটি দোকান। বাজার ছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় এরকম বহু দোকান রয়েছে। প্রত্যান্ত অঞ্চলের এক দোকানির কাছে গ্যাস বিক্রি করার লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো বিক্রির জন্য কোনো লাইসেন্স লাগে না। সবাই বিক্রি করছে, আমি করলে সমস্যা কী আছে?
একই ধরনের বক্তব্য ক্রেতাদেরও। উপজেলার গাব্দেরগাঁও এলাকার সাকিব নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘পর্যাপ্ত সময় পাই না, তাই ঘরের পাশেই মুদি দোকান থেকে চাল-ডাল কিনি, আবার বাসার গ্যাস শেষ হয়ে গেলে তার কাছ থেকেই সিলিন্ডারও ক্রয় করি। এতে আমাদের বেশ সুবিধা হয়।’
অন্য পণ্যের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বা জ্বালানি তেল রাখা ও বিক্রির বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার বিষয়টি জানেন না বেশির ভাগ বিক্রেতা।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানলাম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন নাহার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আপনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান। উনি যদি আমাকে ব্যবস্থা নিতে বলে আমি তখন ব্যবস্থা নিবো।’
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়ে তাকে ঐ সময় পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে বহু কল এবং ম্যাসেজ দিয়েও না পাওয়াতে উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২০ মার্চ ২০২৩