চাঁদপুর

‘মা আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা’

মায়েদের পায়ের কাছে সারিসারিভাবে বসে আছে তাদের স্কুলশিক্ষার্থী সন্তানেরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইকে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে স্কুলড্রেস পরিহিত শিক্ষার্থীরা একযোগে তাদের হাতে থাকা পাত্র থেকে পানি ঢেলে মায়েদের পা’ ধুইয়ে দিতে লাগলো। এর সাথে সাথে তারা সমবেতকণ্ঠে বলে উঠলো ‘মা আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা’ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি’।

সন্তানদের এমন কাজ এবং কথায় অধিকাংশ মা তখন আবেগে আপ্লুত। কেউ কেউ তাদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া নোনা জলে সন্তানদের কপাল ভিজিয়ে দিয়ে সেখানে একের পর এক মমতার চুমু আঁকতে থাকেন। কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ মুছে আদরের ছেলে-মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এমন দৃশ্য দেখে মঞ্চের অতিথি এবং আশপাশের উপস্থিত অনেকেই কেঁদে উঠেন।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ৮ বার নদীভাঙনের শিকার হওয়া চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

উপস্থিত প্রত্যন্ত এ চর এলাকার কৃষক, জেলেসহ সহস্রাধিক খেটে খাওয়া মানুষ। মঞ্চে বসা আমন্ত্রিক গণ্যমান্য অতিথিগণ এবং মাঠের চারপাশে বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। মাঠের দর্শক সারির সামনের চেয়ারগুলতে বিভিন্ন বয়সের মায়েরা।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্লা সরকার বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ আর আপন মানুষটি হলো মা। এই মায়েরা তাদের সন্তানদের একটু ভালো রাখার জন্য কতো ত্যাগ আর কষ্ট স্বিকার করেন। অথচ তাদের সন্তানরা জানা অজানায় ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় সেই মাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে থাকে। আমরা বাইরের কারো সাথে অন্যায় করলে মাফ চাইতে পারি কিন্তু মায়ের কাছে মাফ চাইতে কেমন যেনো লজ্জা পাই। তখন মা এবং সন্তানের মাঝে এ ক্ষেত্রে অদৃশ্য একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সেই দূরত্ব কমিয়ে আনতে এবং এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দিতে আমাদের এই আয়োজন।

অশ্রæসিক্ত চোখে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘এভাবে মায়ের কাছে কখনো ক্ষমা চাইনি, আর মাকে ভালোবাসি বলিনি। সত্যিই আজকে ভালোবাসি বলতে পেরে মনের মাঝে কেমন যেনো সুখ সুখ লাগছে। আসলেই মা আমাদের সবচেয়ে আপন মানুষ। মা আমাদের ভালো বন্ধুও।’

আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৩৩ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার
ডিএইচ

Share