Home / চাঁদপুর / মায়ের হাতে ভাত খাওয়া হলো না দেলোয়ার খানের
মায়ের

মায়ের হাতে ভাত খাওয়া হলো না দেলোয়ার খানের

চাঁদপুর শহরের উত্তর শ্রীরামদী নিশি বিল্ডিং এলাকার (সাবেক কসাই খানা) সংলগ্ন এলাকার মেঘনা নদীতে গোসল করতে গিয়ে নদীতে ডুব দেওয়ার পর তলিয়ে গেছে মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন খান(৩০) নামীয় এক যুবক। এ ঘটনার পর-পর শত-শত এলাকাবাসী দেলোয়ারের নদীতে তলিয়ে যাওয়ার খবরে ছুটে এসে নদী পাড়ে এসে ভিড় করতে দেখা যায়। তার মা’পুত্র শোকে কাতর হয়ে নদী পাড়ে পড়ে ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এ ঘটনায় মেঘনা নদীতে তলীয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে মারা যাওয়া দেলোয়ার খানের মা’খুরশিদা বেগম দুপুরে ছেলের জন্য ভাত নিয়ে বসেই রইলেন। ছেলে নদীতে গোসল করে এসে মায়ের হাতে ভাত খাবে। মায়ের হাতে সে ভাত খাওয়া হলো না ছেলে দেলোয়ার খানের।

ঘটনার পর থেকে খবর পেয়ে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ড বাহিনী, নৌ-ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল মেঘনা নদীতে নেমে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়েও গত ৬ ঘন্টায় পর রাত ৯টা পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যাক্তির কোন সন্ধান করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাটি ঘটেছে,আজ রোববার(১০ডিসেম্বর) দুপুরের পর অনুমানিক পৌনে ৩টায় শহরের উত্তর শ্রীরামদী নিশি বিল্ডিং এলাকার উত্তর দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর অভবাহিকার বুকের কোমর পরিমান পানিতে।

নিখোঁজ দেলোয়ার হোসেন খান নিশি বিল্ডিং এলাকার বাদশা খান বাড়ির মো: আবদুল মান্নান খানের ছেলে। সে পেশায় এক জন রং মিস্ত্রি হলেও বর্তমানে বাড়ির পাশে নিজে দোকান দিয়ে চায়ের দোকানদারী করতেন। তার পরিবারে তার স্ত্রী,২টি শিশু সন্তান ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।

নিখোঁজ দেলোয়ার খানের প্রতিবেশী কামাল হোসেন জানান,আজ রোববার দুপুরের পর দেলোয়ার,তার ভাগিনা রাজু ও মামাতো ভাই জুয়েলসহ এক সাথে গোসল করার জন্য নদীতে নামে। গোসল করার এক পর্যায়ে ৩জনই নদীর পানিতে ডুব দেয়।

কিছুক্ষন পর রাজু ও জুয়েল গোসল করা শেষে আর দেলোয়ারকে দেখতে পায়নি। তারা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলের আশ-পাশে খুজে দেলোয়ারকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং নৌ-থানার ওসি কামরুজ্জামানকে বিষয়টি অবগত করেন।

তাৎক্ষনিক ওসির মাধ্যমে খবর পেয়ে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ড বাহিনী ও নৌ-ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে এসে মেঘনা নদীতে নেমে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে নিখোঁজের কোন সন্ধান করতে পারেনি। এ ছাড়া এলাকার পক্ষ থেকে ৪টি নৌকাদিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও নিখোঁজের লাশের কোন সন্ধান করতে পারেনি এলাকাবাসী। প্রতিবেশী কামাল হোসেন আরো জানান,দেলোয়ার অত্যান্ত ভাল এক জন মানুষ ছিলেন। তিনি দীর্ঘ দিন রংয়ের কাজ করতেন। পরে সে কাজ ছেড়ে চেহারা সুন্দর হওয়ায় ঢাকায় চলে যান অভিনয় করার জন্য চলচিত্রে। সেখানে টাকা না থাকায় অভিনয় করতে না পেরে চাঁদপুর এসে দোকান দেন। দোকান করাকালে ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। অনেক ধার্মিক ছিল দেলোয়ার। মরনের কথা সব সময় স্মরন করতেন। অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন,সামান্য আয়দিয়ে। এখন তার সংসারে সে নাই,পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়লো। তার অসহায় সন্তানদের অনেক কষ্ট জীবন জিবীকা চালাতে।

উল্লেখ্য,এলাকাবাসী জানান,এখানে প্রতি বছর ২/১জন মানুষ এখানে পানীতে তলিয়ে গিয়ে মারা যায়। তার রহস্য কি এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংকো বিরাজ করছে। এখানে গত প্রায় ১মাস পূর্বে এক ব্যক্তি এভাবে নদীর পানিতে গোসল করতে গিয়ে মারা গেলে তার লাশ আর পাওয়া যায়নি।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩