জীবনে হাতের ব্যবহার খুব বেশি। যার হাত নেই কেবল সে-ই বুঝেন হাত যে কী অমূল্য সম্পদ। হাত নিয়ে অনেক বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন আমরা পড়েছি। যেমন- ডান হাতের কাজ/ বাম হাতের কাজ, ডান দল/ বাম দল, উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম, হাত টান ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, তোমাদের উপর যে বিপদ-মুসিবত আসে তা তোমাদের দুই হাতের অর্জন।’ বাংলা কবিতাতেও পাওয়া যায় হাতের ব্যবহার। যেমন, কবি সুফিয়া কামাল প্রার্থনা কবিতায় লিখেন, তুলি দুই হাত/ করি মুনাজাত/ হে রহিম, রহমান। এমনকি চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হাতের তালুতে রয়েছে মানবদেহের সুইচবোর্ড। যা আকু পাংচার বা আকু প্রেসার পদ্ধতি থেকে জানা যায়। হাতের এত এত ব্যবহার দেখেছি কিন্তু খোঁজিনি তাতে আল্লাহর নিদর্শন। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। (সূরা হামিম সেজদা : ৫৩)। তিনি আরও বলেন, বিশ্বাসীদের জন্যে পৃথিবীতে রয়েছে নিদর্শন এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও তোমরা কি অনুধাবন করবে না। (সূরা যারিয়াত : ২০, ২১)। আর এজন্যেই বোধয় সস্প্রতি মানুষের শ্বাসনালী (ট্রাকিয়া) ও ডান ফুসফুস নালীর (ব্রংকাস) সিটি স্ক্যান (কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যান) করে দেখা গেছে তাতে আরবি হরফে লেখা রয়েছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহুম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.। এ সত্য আবিস্কার করেন একজন জার্মান ডাক্তার। পরে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। (মাসিক পৃথিবী, ডিসেম্বর ১৯৯০, পৃ. ৪৯)। মানবদেহ নিয়ে গবেষণা চলবে অনন্তকাল। সত্যিকারের ঈমানি অনুভূতি নিয়ে মানবদেহে গবেষণা চালালে আরও নিদর্শন হয়তো বেরিয়ে আসবে। হাদিসে এসেছে, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে তার রবকে চিনতে পেরেছে।
আজ আমি শুধু দুটি হাত নিয়েই কথা বলব। ডান হাতের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগ একত্র করে তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা আঙ্গুলিত্রয় সোজা দাঁড় করিয়ে রাখলে চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠবে আরবি হরফে লেখা আল্লাহু শব্দটি। খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন (চিত্র : ১)। আবার ডান হাতের পাঁচটি আঙুল সোজা রেখে পিঠের অংশ চোখের সামনে মেলে ধরলে দেখা যাবে স্পষ্ট আরবিতে আল্লাহু শব্দটি লিখা রয়েছে (চিত্র : ২)। কয়েকবার চেষ্টা করুন। আসলেই খুব মজার বিষয়। তা থেকে অনুমিত হয় সত্যিই এতে রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার স্পষ্ট নিদর্শন? এরপর ডান হাতটা চোখের সামনে মেলে ধরুন। আপনি অবশ্যই লক্ষ্য করবেন হাতের তালুতে বিশেষ রেখার মাধ্যমে আরবি ১৮ সংখ্যাটি রয়েছে (চিত্র : ৩)। এবার বাম হাতটা মেলে ধরুন। দেখতে পাবেন আরবিতে ৮১ সংখ্যাটি লিখা রয়েছে (চিত্র : ৪)। দুটি সংখ্যার যোগফল নির্ণয় করলে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তাহলো ৯৯। আমরা সবাই জানি মহান আল্লাহ পাকের ৯৯ টি সুন্দর নাম রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে বক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (বুখারী)।
কুরআন-সুন্নাহর প্রতি বিশ্বাস নেই এমন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, মহান আল্লাহ যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা তা কোথায় লেখা আছে? এর জবাবে আমরা এই মার্কসগুলো প্রদর্শন করতে পারি। এই পৃথিবীতে গুণগত মান সম্পন্ন যতো পণ্য রয়েছে, তার সব কটিতে সারিবদ্ধ অনেকগুলো লম্বালম্বি সরলরেখা লক্ষ্য করা যায়। এগুলিকে বলা হয় বারকোড নম্বর। খালি চোখে দেখা গেলেও তার মিনিংস অনুধাবন করা অসম্ভব। কম্পিউটারের একটি ডিভাইস রয়েছে যার নাম বারকোড রিডার। এই বারকোড রিডার পণ্যের গায়ে শো করলে এর প্রস্তুতকারক, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, মূল্যসহ সব কিছু প্রদর্শন করে। ঠিক তদ্রুপ আমরা ধরে নিলাম মানুষের শরীরে এই বিশেষ চিহ্নগুলি বারকোড নম্বরের মতো। তাই, আল্লাহকে চেনার জন্যে মানুষের দুটি হাতই যথেষ্ট নয় কী? চক্ষুস্মানগণ, একটু ভাবুনত। আমরা কিভাবে এই হাত দিয়ে পাপকার্য সম্পন্ন করি? আর কিভাবে মানুষ মানুষের ক্ষতি করে? অথচ হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, সেই ব্যক্তি মুসলিম, যার জিহবা এবং হাত থেকে অপর ব্যক্তি নিরাপদ। (তিরমিযি ও নাসায়ি)। মহান আল্লাহ পাক তার নিদর্শন গুলিকে চেনার তাওফিক দিন।
লেখক : প্রভাষক (আরবি), মাথিয়া ই. ইউ. ফাযিল মাদ্রাসা, কিশোরগঞ্জ।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬: ৩০ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৮, রোববার
এএস