ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসার ছাদ থেকে পড়ে ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসা ছাদ থেকে পড়ে আলিম (এইচএসসি সমমান) শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই ছাত্রী ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরপাড়া আলিম মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

বুধবার(২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১.২০ মি.-এর সময় শ্রেণি শিক্ষকের পাঠদানকালীন সময় এই ঘটনা ঘটে।

ছাদ থেকে পড়ার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আহত শিক্ষার্থী ডলি আক্তারকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরে হাসপতালের চিকিৎসক আহতের অবস্থা আশংঙ্কাজনক দেখে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে সেখান থেকে ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। সর্বশেষ ঢাকা নেওয়ার পথেই ওই শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মাদ্রাসার বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, চরপাড়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ডলি আক্তার(১৭), পিতা আবুল কালাম, সাং চরবড়ালী পাটওয়ারী বাড়ি।

বুধবার মাদ্রাসার ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনের ২য় তলায় আলিমের ফিকাহ বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক আমজাদ হোসেন। ক্লাস চলাকালীন ডলি আক্তার বোমি আসছে বলে শ্রেণি শিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরক্ষণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ডলিকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে। এসময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহত ডলিকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
নিহত ডলি আক্তার ছাদ থেকে পড়ে গেছে দাবী করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছাদ থেকে পড়ার পর তার ঠোটের পাশ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এসময় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে আমি বিষয়টি ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ, শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি।

তবে গোপন সূত্রে জানা যায়, ডলি আক্তারের সাথে মাদ্রাসা থেকে পূর্বে পাশ করে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর প্রেমের সর্ম্পক ছিলো। যে সর্ম্পকটি ডলির পরিবার ও ওই ছেলের পরিবার মেনে নেয়নি। এনিয়ে তাদের পরিবারে ঝগড়া লেগেই থাকতো।

সবশেষ গত কয়েকদিন পূর্বে ডলির বাবা আবুল কালাম ডলিকে মোবাইলে ব্যবহার থেকে বিরত থাকাতে জন্য কড়া নির্দেশ দেন। তার পর থেকে ডলি খাবার দাবার ছেড়ে দেয়।

অসমর্থিত সূত্রের দাবি ডলির প্রেম ও বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে পারিবারিক কলহের কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে।

এদিকে সরেজমিনে মাদ্রসায় অনুসন্ধান করে দেখা যায়, মাদ্রাসার ভবনের পশ্চিম পাশের একটি অংশের নির্মাণ কাজ অসম্পন্ন রয়েছে। পুরাতন মূলভবনের সাথেই নতুন ওই ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। তবে অসম্পন্ন ভবনের ছাদের চার পাশ উন্মক্ত রয়েছে। আর শিক্ষক ২য়তলার যে কক্ষে পাঠদান করছিলেন তার থেকে ডলি যে স্থানে উপর থেকে মাটিতে পড়ে যায় তার বেশ দূরুত্ব রয়েছে।

উপস্থিত অনেকেই প্রশ্ন রেখে বলতে চান, ‘২য় তলার ছাদটি উন্মক্ত থাকার পরও ডলি কেন ছাদের উপর ফেলে রাখা রডের বাধা ডিঙ্গিয়ে উন্মক্ত ছাদের কার্নিশের কাছে বমি করতে যাবে? আর ওখানে কোন বমির আলমতও পাওয়া যায়নি।’

আলিমের ২য় বর্ষ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ডলি আমাদের কাছে তার পারিবারিক কোন বিষয়ে কিছু বলেনি। সে আমজাদ হুজুরের কাছে অনুমতি নিয়ে শ্রেণি কক্ষের বাহিরে যায়। পরে শুনতে পাই সে মাদ্রাসার ২য় তলার ছাদ থেকে পড়ে গেছে।’

এসর্ম্পকে জানার জন্য বুধবার দুপুরে চরবড়ালী পাটওয়ারী বাড়িতে গেলে নিহতের প্রতিবেশী ও নিকটত্মায়ীরা সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কানা-ঘুষা করতে থাকে।

নিহতের বাবা আবুল কালামের কাছে বুধবার বিকালে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘মেয়ে মাদ্রাসার ছাদ থেকে পড়ে গেছে নাকি লাফ দিয়েছে এ বিষয়টি আমি জানি না। বর্তমানে মেয়ের অবস্থা আশংঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। (ততক্ষণে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি) এই কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।’

প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
: : আপডেট, বাংলাদেশ ৯: ০৩ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share