যে অস্ত্র ৫০ সেকেন্ডে মার্কিন রণতরী ধ্বংস করবে

পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালীতে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর নবম সামরিক মহড়া চলছে। আজ ছিল মহড়ার দ্বিতীয় দিন।

‘মহানবী-৯’ বা ‘ইয়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)’ শীর্ষক সাংকেতিক নামের এই মহড়া শুরু হয় বুধবার। গতকাল সকালে ত্রিশটি স্পিডবোটের মাধ্যমে খুব দ্রুত গতিতে মাইন বিছানোর অভিযান এবং উপকূল থেকে সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মহড়া চালায় ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী তথা আইআরজিসি।

ব্যালিস্টিক ও সাগর থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপসহ বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে এই মহড়ায়। আইআরজিসি’র এই মহড়ায় ২০ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন টর্পেডোসহ মাঝারি পাল্লার টর্পেডোর কার্যকারিতাও পরীক্ষা করা হবে এই মহড়ায়। ইরানের সবচেয়ে দ্রুতগতি-সম্পন্ন টর্পেডো প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম।

গতকাল একটি নকল মার্কিন বিমানবাহী রণতরীর ওপর প্রায় ৪০০টি ১০৭ মিলিমিটার গোলা নিক্ষেপ করে ৫০ সেকেন্ডের মধ্যে তা ধ্বংস করে দেয় বিপ্লবী সেনারা। ফলে ইরান যে মার্কিন যুদ্ধ-জাহাজগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম এই মহড়ায় তা প্রমাণিত হয়েছে।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র সিনিয়র কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভি বলেছেন, হুমকি সৃষ্টি হলে পারস্য উপসাগরে ইরানি নৌবাহিনী মার্কিন বিশালাকারের যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম।

তিনি আরো বলেছেন, যদি ভবিষ্যতে আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধও হয় তাতে মার্কিন নৌবাহিনী পরিচালিত যুদ্ধজাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো ইরানের পক্ষে কোনো কঠিন কাজ নয়।

গতকাল ইসলামী বিপ্লবী সেনাদের নৌ-বাহিনীর যুদ্ধ-জাহাজ, হেলিকপ্টার ও উপকূলীয় ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম থেকে ছোঁড়া হয় ১৭টি ক্ষেপণাস্ত্র। এসবের মধ্যে চারটি ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই চার ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে দু’টি ছিল ‘খালিজ ফার্স’ মডেলের এবং একটি ছিল ‘ফতেহ-১১০’ ও একটি ছিল ‘জিলজাল’ বা ভূমিকম্প মডেলের। ফতেহ ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে ২৭০ কিলোমিটার দূরের একটি জনমানবহীন দ্বীপে।

আইআরজিসি’র কমান্ডার মেজর জেনারেল মুহাম্মাদ আলী জা’ফরি বলেছেন, তার নৌ-সেনারা ওমান সাগর, হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।

রাডার-সজ্জিত স্পিড-বোট, ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ২৫ কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, জাহাজ-বিধ্বংসী মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ভারী মেশিনগান, রকেট-লঞ্চার এবং কাঁধে বহনযোগ্য উৎক্ষেপক থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ছিল এই মহড়ার আরো কিছু সাফল্যের দিক।

এই মহড়ায় শত শত টার্গেটের ওপর নির্ভুল আঘাত হেনে সেইসব টার্গেটকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ইরান একদিকে যেমন শত্রুদের নিরুৎসাহিত করেছে, তেমনি বন্ধু দেশগুলোর কাছে এই শান্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে, এ অঞ্চলের দেশগুলো ইচ্ছে করলে বাইরের সাহায্য ছাড়াই নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করতে সক্ষম হবে।

ইরান গত কয়েক বছরে সামরিক খাতে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে এবং মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
সূত্র : রেডিও তেহরান।

Share