ভুল আর ভুল চার দিকে বানান ভুল। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলা শহরে দোকানপাট এবং প্রতিষ্ঠান-ভবনের সাইনবোর্ডগুলোর দিকে তাকালেই বাংলা ভাষার করুণ অবস্থা দেখা যায় ।
‘ভুল’ শব্দটি লেখার ক্ষেত্রেও অনেকেই ভুল করে লেখেন ভূল। যত অবজ্ঞা আর অবহেলা বাংলা বানানে যা দেখে মনে হয় বানান ভুলের রাজ্যেই আমরা বসবাস করছি। শুধু তাই নয়, রাতে শহরের আলোর খেলায় হরেক রকমের দেয়াল লিখন ও সাইনবোর্ড গুলোর দিকে নজর দিলে বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলার যে চিত্র, তা দেখে ভড়কে যেতে হয়। বর্তমানে দেয়াল লিখন ও সাইনবোর্ডগুলোতে হাজারো ভুল বানানে জ্বলজ্বল করছে।
এতে মনে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষা বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার আসল উদ্দেশ্য থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। ১৯৭১ খ্রি. ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন “আমি ঘোষণা করছি, আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে, সেদিন থেকে দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে। বাংলা ভাষার পণ্ডিতগণ পরিভাষা তৈরি করবেন, তার পরে বাংলা ভাষা চালু হবে, সে হবে না । পরিভাষাবিদেরা যতো খুশি গবেষণা করুন, আমরা ক্ষমতা হাতে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা চালু করে দেবো। সে বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে, পরে তা সংশোধন করা হবে”
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও আমরা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পারিনি, যা আমাদের জন্য অপমানের। এখনো দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়নি! ভুল বানানের ছড়াছড়ি বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ হয়নি! বাংলা ভাষা ও বানানরীতি ঠিক করার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির। আর এর সঠিক প্রয়োগ করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের।
সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণে শুধু রাজধানি নয়, দেশের সর্বত্র যেন চলছে ভুল বানানের মহড়া। ণত্ব-ষত্ব বিধানের একটি নিয়ম হল বিদেশি শব্দে “ণ” , “ষ”, এর ব্যবহার নেই ।
অথচ রাস্তায় বের হলে ভুল বানানের সাইনবোর্ডগুলোর প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন, ষ্টার, ষ্টোর, ষ্ট্যান্ড, ইনিষ্টিটিউট, ফার্ণিচার, মর্ডাণ, রেষ্টুরেন্ট,কর্ণেল, ডায়াগনষ্টিক, ষ্ট্যাম্প, রেজিষ্ট্রি, পোষ্টার, ফাষ্টফুড, রেজিষ্টার এ ধরণের হাজারো ভুলবানান গুলি কচিমনা শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পূর্বেই শিখে ফেলে।
এ শব্দগুলোর সঠিক বানান হলো:- স্টার, স্টোর, স্ট্যান্ড, ইনিস্টিটিউট, ফার্নিচার, মডার্ন, রেস্টুরেন্ট, কর্নেল, ডায়াগনস্টিক, স্ট্যাম্প, রেজিস্ট্রি, পোস্টার, ফাস্টফুড, রেজিস্ট্রার। কারণ এগুলি ইংরেজি শব্দ অর্থাৎ বিদেশি শব্দের ফলে ণ,ষ হবে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে শুনবে কার কথা ? “বানান ভুল বন্ধে আন্দোলন করতে হবে” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক যথার্থ বলেছেন, ‘সাইনবোর্ডে ভুল, টেলিভিশনের পর্দায় ভুল, পত্রিকার পাতায় ভুল, ভুল আর ভুল, মনে হয় ভুলের রাজ্যেই যেন আমাদের বসবাস । সূত্র: কালের কণ্ঠ ২২-২-১৫।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়ে গেল, অথচ সর্বস্তরে বাংলা-তো চালু হয়ইনি! এমনকি বাংলা ভাষা –বানান নির্ভুল করে লেখার অভ্যাসটুকু আমরা করিনি! এদিকে চিকিৎসকগণ ব্যবস্থাপত্র ইংরেজিতে লেখার কারণে ওষুধের ফার্মেসিতে বিক্রয় কর্মিরা ভুল করে, ভুল ওষুধ দিয়ে রোগিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
অথচ বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লিখলে এরকম মৃত্যুর ঘটনা ঘটতনা। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে বাংলায় মামলার রায় হওয়া প্রয়োজন। কারণ আদালত থেকে বাংলা ভাষা চর্চা শুরু করতে পারলে বাংলাদেশের সর্বত্রে বাংলা ভাষা চর্চা চালু হবে এমনটাই বিশ্বাস বাংলা ভাষা প্রেমিদের।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুর সু-যোগ্য কন্যা। আপনিই পারেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষা ও ভাষা শহীদদের সম্মানে সর্বত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার চালু করতে। বাংলা ভাষা প্রেমিরা আজ তাকিয়ে আছে আপনার উদ্যোগের দিকে। আপনার মাধ্যমে বাংলা ভাষা সর্বত্র চালু হয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি উদ্যোগ নিবেন, এমনটাই প্রত্যাশা বাংলা ভাষা প্রেমি কোটি-কোটি মানুষের।
লেখক- আলহাজ্ব অধ্যাপক এস. এম চিশতী
অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ
০১৭১২-১৭০৬১৪
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ০৩ এএম, ১১ নভেম্বর, ২০১৭ শনিবার
ডিএইচ