Home / শীর্ষ সংবাদ / মতলব দক্ষিণে ১০ মাসে ৬ খুন
Dead-Khun-Death

মতলব দক্ষিণে ১০ মাসে ৬ খুন

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১০ মাসে (গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর) ১৫টি খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আদালত ও থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হন ২০ জন।

ব্যক্তিগত ও সম্পত্তি নিয়ে পূর্বশত্রুতা, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, মূল্যবোধের অভাব ও হতাশার জেরে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মতলব দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উপজেলায় ছয় ব্যক্তি খুন হন। এসব ঘটনায় ছয়টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে থানায় চারটি এবং চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা হয় দুটি। খুনের অভিযোগে পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

সূত্রটি জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপজেলার লেজাকান্দি গ্রামের গৃহবধূ হাওয়া বেগম এবং ১৩ এপ্রিল নওগাঁও গ্রামের গৃহবধূ রাবেয়া আক্তার স্বামীর বাড়িতে খুন হন। নিহত এই দুই গৃহবধূর স্বজনেরা ঘটনার পরদিন চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সম্পত্তি নিয়ে বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বের জেরে ১৯ জুন উপজেলার দুদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি খুন হন। অভিযোগ রয়েছে তাঁর ছেলে মো. শুভ এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। এ ঘটনায় দুদ মিয়ার বড় ছেলে কবির হোসেন বাদী হয়ে শুভকে আসামি করে মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০ জুন শুভকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সূত্রটি আরো জানায়, গত ১৯ আগস্ট একটি দামি মুঠোফোন সেট ছিনিয়ে নিতে উপজেলার পিয়ারীখোলা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি সোহেল রানাকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সোহেলের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই গ্রামের মো. ফরহাদ, মো. রুবেল ও মেহেদী হাসান নামের তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ২৬ অক্টোবর কাশেমপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এবং ২৪ ডিসেম্বর তাওহিদুল আলম নামের আড়াই বছরের এক শিশু খুন হয়। জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আসমা আক্তার বাদী হয়ে ২৭ অক্টোবর থানায় মামলা করলে পুলিশ দুই আসামি পারুল বেগম ও লিটন প্রধানীয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাওহিদুল আলম হত্যাকাণ্ডে ২৫ ডিসেম্বর তার চাচা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর জাহেদা আক্তার ও লাকী আক্তার নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।১৬ মে উপজেলা এক তরুণী এবং ১৮ আগস্ট এক কিশোরী, ২২ সেপ্টেম্বর এক যুবতী, ২৬ অক্টোবর এক কিশোরী, ৫ নভেম্বর আরেক কিশোরী এবং ৫ ডিসেম্বর এক কলেজছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। এসব ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ সেপ্টেম্বর এক শিশুকে (৭), ১৫ সেপ্টেম্বর এক কিশোরীকে এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এসব ঘটনায় থানায় স্বজনেরা মামলা করলে পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার এসব মামলায় গ্রেপ্তার ওই ১২ ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরীর অভিভাবক বলেন, মানসম্মানের কথা চিন্তা করে অনেক মেয়ের পরিবার ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা এড়িয়ে যায়। পুলিশকে জানায় না বা মামলাও করে না। এ জন্য ধর্ষণের প্রকৃত হিসাব থানার হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি।

মতলব সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক হাকিকা আক্তার বলেন, প্রকৃত শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পূর্বশত্রুতার জের ও হতাশা থেকে খুন ও ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধগুলো ঘটছে। এসব বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ বলেন, খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে এসব মামলার তদন্ত করে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে। এসব অপরাধ বন্ধে তাঁর পুলিশ প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।(প্রথম আলো)

বার্তা কক্ষ,২৫ জানুয়ারি ২০২০