Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলব উত্তরে আখের ফলন ও দামে কৃষকের মুখে হাসি
আখের

মতলব উত্তরে আখের ফলন ও দামে কৃষকের মুখে হাসি

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁদপুরে এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর তাই হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

জেলার মতলব উত্তরে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর এ উপজেলায় আখের চাষ হয়েছে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে।

পাশাপাশি ন্যায্য দাম পেয়ে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকের মুখে। গোটা উপজেলা জুড়ে আখের বেশ চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মতলবের সুস্বাদু এ রসালো আখ মিষ্টি বেশি হওয়ায় পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। দেশীয় জাতের আখ (চাঁদপুর গেন্ডারী) চাষে চাঁদপুর জেলার সুনাম ও সুখ্যাতি বহু বছরের। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় দেশীয় জাতের ২০৮ ‘চাঁদপুর গেন্ডারী’। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এ আখ অন্যতম।

মতলব উত্তরের কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড়,দশানী, বালুচর, শিকিরচর,ছোট হলদিয়া, নিশ্চিন্তপুর, নান্দুরকান্দি, লবাইরকান্দি, বড় হলদিয়া, সরদারকান্দি, ওটারটরম হাজীপুর, রাঢ়ীকান্দিসহ কয়েককটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা এখন আখ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এমনকি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকাররা এসে মিনি ট্রাক ও ট্রলারযোগে আখ নিয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের আখ খুব মিষ্টি হওয়ায় ঢাকায় মতলবের আখের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিটি আখ পাইকারি ২০-২৫ টাকা দরে কৃষকরা পাইকারি বিক্রি করছে। ঢাকায় তা পাইকারি ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।

ছেংগারচর পৌরসভার বারআনী গ্রামের কৃষক নাসির (৭০) জানান, তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে আখ চাষ করছেন। আখ চাষের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও পূর্ব পুরুষরা যেভাবে করেছেন, তিনিও সেভাবেই চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে নতুন জাতের রঙ্গ বিলাস আখের চাষ করেছেন। নতুন জাতের এ আখের ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। দেশিয় জাতের আখের চাইতে রঙ্গ বিলাস আখের বাজার দর অনেক বেশি। প্রতিটি আখের খুচরা দাম ৫০ টাকা।

হানিরপর গ্রামের গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৬৫) জানান, আমি ১৯৮৮ সালের পর থেকে আখের আবাদ করছি। এবার আমি প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি এবং ফলনও খুব ভাল হয়েছে। এলাকার অনেকেই এবার আখ চাষ করেছে, তাদের ও ফলন খুব ভালো হয়েছে। এ বছর আখ তিনি খেতেই পাইকারিদের কাছে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। আর মুনাফা হয়েছে তার ১০ হাজার টাকা।

দশানী গ্রামের কৃষক সিদ্দিক (৪০) জানান, তিনি দেশীয় জাতের আখ চাষ করেন। এ বছর তাদের আখের ফলন অন্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কেউ তাদের কাছে আসেনি। নিজেরা পরিশ্রম করে আখ চাষ করেন। তবে এখন পর্যন্ত বাহিরের বেপারীরা না আসায় দুশ্চিন্তায় আছি। আখ খেতে বিক্রি করতে পারবো কিনা।

এদিকে, খুচরা বাজারে বড় সাইজের আখ ৫০-৬০ টাকা ও মাঝারি সাইজের আখ ৪০-৪৫ টাকা ও ছোট সাইজের আখ ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার চেয়েও মূল্য বেশি পেয়ে কৃষকরা একদিকে যেমন খুশি, অন্যদিকে প্রতি বছরই চিবিয়ে খাওয়া আখ চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাজারগুলোতে খুচরা আখ ব্যবসায়ীদের কেনা-বেচা খুব ভালো চলছে। প্রচন্ড রোদে রসালো এ আখ পেয়ে ক্রেতারা আখের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। অনেকে আবার আত্মীয়দের বাড়ি বা নিজের বাড়িতেও আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকাররা কৃষককের খেত থেকে আখ কিনে তা শ্রমিক দিয়ে আখ তুলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শুক্রবার সরেজমিন উপজেলার হানিরপাড় এলাকায় বেপারী মুক্তার (৪২)সহ আরো কয়েকজন বেপারীকে আক তুলতে দেখা গেছে। এ অঞ্চলের আখ খুব মিষ্টি হওয়ায় ঢাকায় মতলবের আখের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিটি আখ পাইকারি ২০-২৫ টাকা দরে কৃষকরা পাইকারি বিক্রি করছে। ঢাকায় তা পাইকারি ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতি বছরই তারা এ অঞ্চল থেকে খেত থেকে আখ কিনে থাকেন।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভিতরে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬টি জাতের আখ আবাদ হয়েছে। সেচ প্রকল্পের উঁচু জমিগুলো পলি ও দোআঁশ মাটির পরিমাণ বেশি থাকায় আখের ফলন প্রতি বছরই ভালো হয়।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চাহিদার চেয়েও মূল্য বেশি পেয়ে কৃষকরা একদিকে যেমন খুশি, অন্যদিকে প্রতি বছরই চিবিয়ে খাওয়া আখ চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন জানান, চাঁদপুরে সাধারণত দেশীয় প্রজাতের আখ চাষ হয়। যা চাঁদপুর গেন্ডারী নামে পরিচিত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে।

স্থানীয় চাঁদপুর গেন্ডারী-১০০, মিশ্রিমালা, অমৃত, ঈশ্বরদী-১ ও ঈশ্বরদী-২ জাতসহ ৬টি জাতের আখ চাষ হয়েছে। আখের চারা রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত ৬৮ মাস সময় লাগে। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে কৃষকরা যেন তাদের ফসল বাঁচাতে পারে সে জন্য যথাসময়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক,২৮ আগস্ট ২০২২