Home / কৃষি ও গবাদি / মতলবে চাষীদের শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে
matlob

মতলবে চাষীদের শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে

অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোর ব্যস্ততা বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ সবজি লাগাতে জমি প্রস্তুত করছেন। কেউ জাতভেদে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউবা সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউবা কীটনাশক স্প্রে করছেন। এক কথায় বাড়তি লাভের আশায় শীতকালীন রকমারি সবজি চাষে মাঠে মাঠে চলছে একধরনের কর্মযজ্ঞতা।

আগাম সবজি চাষে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, লালশাক, পালংশাক, করলা, লাউ, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, গাজর, টমেটোসহ নানা জাতের সবজি চাষ করছেন মতলব উত্তরের কৃষকরা। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়,বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপির জুরি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলেছেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার আদুরভিটি গ্রামের কৃষক নূর নবী ও সাইফুল বেপারী।

তারা দু’জন মিলে অন্যের জমি লিজ নিয়ে ৪ থেকে ৫ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনে সবজি চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন।

আদুরভিটি এলাকার সাড়ে তিন একর জমি বছরে ৫০ হাজার টাকায় লীজ নিয়ে সারাবছর বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন তারা। ক্ষেত থেকে সরাসরি উপজেলার ছেংগারচর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকাররা সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।

নুর নবী ও সাইফুল বেপারী বলেন,‘সবজির কদর সারাদেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। ’

সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুনগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানা তারা।

নুর নবী আরো জানান, ‘আবহাওয়া একটু হেরফের হলে সবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়তি বৃষ্টি হলে সমস্যা। ঘন কুয়াশা হলে সমস্যা। শ্রম দিতে হয় অনেক বেশি। ব্যয় তুলনামূলক বেশি। সবশেষ ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে। কপালে থাকলে স্বল্প জমির শীতের আগাম সবজিতেই ভাগ্য লাল।’

শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে তারা ধনে পাতা,সিম, লাল শাক, মুলা শাক, ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন। কার্তিক মাসের শেষ দিকে তাদের সবজি বাজারে উঠবে। এজন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে রোপণ করেছেন। তার মতো অনেক কৃষকই বাড়তি লাভের আশায় এখন শীতকালীন

সাড়ে দু’ একর জমিতে ১৫-২০ হাজার কপির চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার পেছনে তাদের খরচ হবে পাঁচ থেকে সাত টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে। কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে দু’থেকে তিন লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন ওই দু’কৃষক।

এদিকে নূর নবী ও সাইফুল বেপারীর সবজি বিপ্ল¬ব দেখে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজি চাষির সংখ্যা। বড়বাড়ি বে¬াকেই রয়েছেন অর্ধশত সবজি চাষি। যারা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করছেন।

তারা জানান,অল্প পরিমাণ জমিতেই সবজি চাষ করা যায়। জাতভেদে সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদা মেটানো যায়। সবজি চাষ করলে হাতে কমবেশি সবসময়ই নগদ টাকাও থাকে। যা অন্য ফসল চাষ করে সম্ভব না।

ছেংগারচর পৗরসভার ঠাকুরচর এলাকার কৃষক তবদিল হোসেন ও মিজানুর রহমান সরকার জানান, সবজি চারা রোপণের আগে জমি তৈরি করে কিছু দিন রাখা হয়। এতে কপির চারা রোগ-বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা সঞ্চয় করে এবং গাছগুলো সবল হয়। নিজেরাই বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন তারা। তবে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় তাদের নিজের চারাগুলো নষ্ট হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হওয়ার আশাবাদী তারা।

চাষী তবদিল আরো জানায়, শীতকালীন আগামজাতের সবজি চাষে কমবেশি লাভ থাকেই। যা অন্য সময় করলে নাও থাকতে পারে। তবে আগামজাতের সবজি চাষে ঝুঁকি থাকে। আর বাড়তি লাভ করতে চাইলে প্রত্যেক সবজি চাষিকে সামান্য ঝুঁকি নিতেই হবে।

মতলবে শুধু বশত বাড়ি এলাকায় নয় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষের ব্যাপকতার জন্য মতলব উত্তর উপজেলার আদুরভিটি, বালুচর, হানিরপাড়, ঠাকুরচর, পালালোকদী, আবুরকান্দি, নিশ্চিন্তপুর, শিকিরচর, কেশারাইরকান্দি, ছেংগারচর, ষাটনল,ইমামপুর, বাগানবাড়ি, সটাকী, ফালীকান্দি,বলাইরকান্দি, কলাকান্দা, সুজাতপুর, ওটারচরসহ বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি। শীতের শুরুতে এগুলো যাবে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন উপজেলায় যাবে এ সবজি।

উপজেলার পালালোকদী গ্রামের সবজি চাষি মফিজুল ইসলাম জানান, সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে। আগামি সপ্তাহে মূলা বীজ বপন ও কপি’র চারা রোপণ করবেন তিনি। কপি চারা রোপণ থেকে ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল বাজারে তোলা যায়। এ বছর তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়,গত বছর এ উপজেলায় ৯৪০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছিলো। চলতি বছর সাড়ে ’নয়শ’ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে রবি ১৯-২০ জাতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে। মার্চে মধ্যবর্তী পর্যন্ত এ রোপণ ও বপন চলবে।

মতলব উত্তর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পায়, সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন। শুধু এ উপজেলায় নয়, সারাদেশে আগাম সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।’

মতলব উত্তর উপজেলঅ কৃষি অফিসার মো. সালাউদ্দিন বলেন,‘কৃষি বিভাগের লোকজনের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে।আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছেকয়েকগুণ। চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। ’

খান মোহাম্মদ কামাল , ১৯ সেপ্টেম্বও ২০১৯
এজি