মানুষ যখন তার মানুষত্ব হারিয়ে ফেলে, তখন সে প্রতারণা করে তার অপরিচিত কারো সাথে, কোনো কোনো সময় নিজের ভােই-বোন, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে।
কিন্তু মায়ের সাথে প্রতারণা করে এমন মানুষত্ববোধহীন প্রাণী হয়তো এ সমাজেই কমই পাওয়া যাবে। প্রতারণামূলক কাণ্ড ঘটিয়েছে এক পাষণ্ড ছেলে। যে ছেলে ছোট বেলা হারিয়ে যাওয়া কারণে, মা তার শোকে কান্না করতে করতে দু’টি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছেন, সে মায়ের সাথে প্রতারণা করেছে ওই ছেলে।
মতলব উত্তর উপজেলার ঠেটালিয়া গ্রামের দৃষ্টিহীন মায়ের চোখের চিকিৎসা করার নামে অপকৌশলে জমি লিখে নিয়েছে তারই বড় ছেলে। এই নিয়ে দীর্ঘ সময় এলাকায় দেন-দরবার চললেও অবশেষে ওই দৃষ্টিহীন বিধবা নারী মাজেদা বেগম আদালতে মামলা করে। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিহীন মাজেদা বেগমের স্বামী রহিম ঢালী ১৯৯৫ সালে এলাকার আলী আকবার ঢালীর কাছ থেকে তার ও স্ত্রীর নামে ৪০ শতাংশ জমি ক্রয় করে। অপরদিকে তাদের বড় ছেলে ইয়াকুব আলী ছোট বেলায় বাড়ি থেকে রাগ করে চলে যাওয়ার পর দীর্ঘ ২২ বছর পর ফিরে আসলে তাকে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের পরই ইয়াকুব ও তার স্ত্রী মিলে মাজেদা বেগমের চোখের চিকিৎসা করার নাম করে গোপনে ঘনিয়ারপাড় সাব-রেজিষ্টার অফিসে নিয়ে গিয়ে দলিলে টিপ সই রেখে জমি লিখে নেয়।
মাজেদার মেজো ছেলে খলিল বলেন, আমার ভাই-বোনেরা মিলে যখন মাকে বাড়ির জায়গা ভাগ করে দিতে বলি,তখন বড় ভাই ইয়াকুব জানায় সব জায়গা তার। মা নাকি তাকে জমি লিখে দিয়েছে। আমার মা ওই কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় এবং চিকিৎসার নাম করে জমি লিখে নেওয়ার কথা বের হয়ে আসে। এই নিয়ে প্রতিবাদ করলে সে আমাদের নামে ভুয়া মামলা দেয়।
মেয়ে রোজিনা বলেন, বড় ভাই হায়িয়ে যাওয়ার পর আমার মা তার চিন্তায় ও কান্নাকাটি করতো। এ কারণেই তিনি অন্ধ হয়ে যান। জমি লিখে নেওয়া পর বড় ভাই মাকে রাত ৩টায় বাড়ি থেকে নিয়ে অন্য কোন এলাকায় ছেড়ে দিয়ে আসে। ওই ঘটনায় প্রায় একমাস পর আমার ছোট বোনের স্বামী চাঁদপুরে খুঁজে পান।
দৃষ্টিহীন মাজেদা বেগম বলেন, আমার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াকুব বাড়িতে ফিরে আসলে তাকে বিয়ে দিই। সে আমার চোখের চিকিৎসা করার নাম করে হাসপাতালে থাকা ও খাওয়া জন্য টিপসই নেয়। আবার বড় ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য স্বাক্ষর নেয়। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি, সে আমার সর্বনাশ করছে। বাড়ি থেকে বেড়াতে যাওয়া নাম করে সে আমাকে কোথায় যে ছেড়ে দিয়ে আসে বুঝতে পারিনি। আমি তার উচিত বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ইয়াকুব আলী মুঠোফোনে বলেন, আমার মা স্ব ইচ্ছায় আমাকে জমি লিখে দেয়। আমি কোন অন্যায় করিনি।
পলাশ রায়, মতলব [/author]