সারাদেশ

বুড়িচংয়ে ১২ হাজার একরে ৩০ হাজার মে.টন ফসলের সম্ভাবনা

দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতা ও সেচ সংকটের কারণে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অনাবাদী ফসলের মাঠ ‘পয়াতেরজলা’য় দূর হতে চলছে কৃষকের দীর্ঘদিনের সমস্যা।

সম্প্রতি খাল খননের ফলে এসব অনাবাদী জমিতে ফলবে অন্তত: ৩০ হাজার মে.টন ফসল।

কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার একটি বিস্তীর্ণ অনাবাদী ফসলের মাঠ ‘পয়াতেরজলা’। যেখানে জলাবদ্ধতার কারণে ২০ বছর ধরে অনাবাদী ৫ হাজার কৃষকের ১২ হাজার একর তিন ফসলী জমি। বুড়িচং উপজেলার সদর, বাকশীমুল, ষোলনল ও রাজাপুর ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশ নিয়ে পয়াতের জলা। আর অবৈধ দখল ও বিভিন্ন অংশে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিলো ঘুংঘুর ও পাগলী নদীর শাখা ‘পয়তের খাল’। এতে করে উপযুক্ত নিষ্কাশন পথের অভাবে পানি বের হতে পারে না।

ফলে, কখনো জলাবদ্ধতা,কখনো সেচের অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে অনাবাদী ছিলো বিস্তীর্ণ ফসলের এ মাঠ। ওই এলাকার কৃষি ও কৃষকের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিলো খালটি। কৃষকগণ পয়াতের জলায় লাগাতে পারতেন না রোপা-আমন আবার বোরো ধানও তুলতে পারতেন না।
কখনো কখনো এসব জমিতে এক ফসল হলেও বেশিরভাগ সময়ই নষ্ট হয়েযেত কৃষকের ফসল। পয়াতের খাল যার একমাত্র সমাধান।
স¤প্রতি বাংলাদেশ কৃষিউন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসির উদ্যোগে দখল মুক্ত করে খালটি খননের ফলে,দূর হতে চলছে ওই এলাকার কৃষকের দীর্ঘদিনের সমস্যা। এসব অনাবাদী জমিতে ফলবে অন্তত: ৩০ হাজার মেট্রিকটন ফসল। উপকৃত হবে পাঁচ হাজার কৃষক পরিবার। পরিবার গুলোতে সুদিনের আশায় খুশির আমেজ বইছে।

বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের বুড়িচং ইউনিটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মানিক মিয়া জানান, চলতি বছরের শুরুতে মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে জলার চারপাশের খালের ২৫ কি.মি.খাল পুনঃখনন কাজ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ এলাকার কৃষকের দুর্ভোগ এখন রিসন হবে পয়াতের খাল খননের মধ্যদিয়ে। যার প্রায় ৮০ শতাংশ খনন কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে জানান বিএডিসি‘র মাঠপর্যায়ের এ কর্মকর্তা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,যেখানে খাল কাটা হয়েছে সেখানের পাশের মাঠে সবুজ ফসল বাতাসে দোল খাচ্ছে। ফসলের মাঠে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বকের ঝাক উড়ে বেড়াচ্ছে। খাল কাটা হওয়ায় খুশি এলাকার কৃষকরা। অন্যদিকে যেখানে খাল কাটার বাকী সেখানে জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয়রা কৃষকরা জানান,দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কারণে পয়াতের জমি গুলোতে একদিকে যেমন জোঁকের উপদ্রব বেড়েছে অন্যদিকে আগাছা জন্মে তা পরিত্যক্ত অবস্থায় চারণভূমিতে পরিণত হয়েছিলো। খাল খননের ফলে এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদিত ফসল খননকৃত খালের পাড় দিয়ে সহযেই পরিবহন করে কৃষকের বাড়ীতে নিতে পারবে। এতে এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটবে।

আর বিএডিসির কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, করোনা মহামারীর মধ্যেও দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার অংশ হিসেবে মুজিব শতবর্ষে পয়াতের খাল খননের মধ্য দিয়ে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ১২ হাজার একর অনাবাদী জমি চাষের উপযোগী করা হচ্ছে। সে সাথে কিছু জমি আসবে তিন ফসলের আওতায় । এ মাঠে ৩০ হাজার মে.টন ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের ৫ হাজার কৃষকের হাহাকার শেষ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

শুধু বুড়িচংয়ের পয়াতের জলা নয়, সবগুলো মরা খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলার সকল জমি জলাবদ্ধতা মুক্ত এবং সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে কৃষি উৎপাদনে কুমিল্লা আরোও এগিয়ে যাবে সবার এমনটাই প্রত্যাশা ।

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা ব্যুরো: ১৯ এপ্রিল ২০২১
েএজি

Share