দুই স্বামীর কাছ থেকে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা নিয়েছেন জুঁই। খবর শুনে স্ট্রোক করে মারা গেছেন এক স্বামী। ফারহানা নাসরিন জুঁই নামে এক নারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে নিজের ভাই ও দুই স্বামীর এক কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে খুলনার আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য খুলনার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দৌলতপুর থানা) মামলাটি করেন ওই নারীর বড় ভাই মোস্তফা ফয়সাল। তিনি নগরীর গোয়ালখালী মেইন রোড এলাকার এস এম বাবর আলীর ছেলে।
জানা যায়, নিজের ভাই ও দুই স্বামীসহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন ফারহানা নাসরিন জুঁই। অর্ধডজনের বেশি মানুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর তাদের ছুড়ে ফেলেছেন। বাবা-মায়ের প্রশ্রয়ে ভাইয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যারা তার কাছে টাকা ফেরত চেয়েছেন তাদের সন্ত্রাসী দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়েছেন। এ অবস্থায় অর্থ ফেরত পেতে জুঁইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভাই।
আদালত সূত্র জানায়, বাদীপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মালেক আদালতে মামলাটি দাখিল করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মো. শাহীদুল ইসলাম মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ১৫ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্যসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন বিচারক।
এজাহারে বাদী মোস্তফা ফয়সাল উল্লেখ করেন, ২০১২ সালে সরকারিভাবে চাকরি পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাই। যাওয়ার সময় আমার বোন ফারহানা নাসরিন জুঁই বিদেশ থেকে অর্জিত অর্থ তার নামে পাঠানোর জন্য বিভিন্নভাবে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেন।
বলেন, বাবা-মায়ের নামে টাকা পাঠালে তারা সব খরচ করে ফেলবে, দেশে ফিরে কিছুই পাবে না। সে কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার বছরে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংক দৌলতপুর শাখায় জুঁইর নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে ৬০ লাখ টাকা পাঠাই। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে জুঁইর কাছে নিজের পাঠানো টাকা ফেরত চাই।
কিন্তু টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা শুরু করে জুঁই। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে একাধিকবার আলোচনা হলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়। সর্বশেষ ৩১ আগস্ট টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি জুঁই। ওই সময় টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে সে।
মোস্তফা ফয়সাল বলেন, ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ফারহানা নাসরিন জুঁইয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই জমি কেনার কথা বলে স্বামীর কাছ থেকে তিন দফায় ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় জুঁই। ওই সময় ইমরান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে জুঁই। বিষয়টি জানতে পেরে স্বামী জিয়াউর রহমান আয়ারল্যান্ডেই স্ট্রোক করে মারা যান।
মোস্তফা ফয়সাল আরও বলেন, ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর ঢাকার ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন কবিরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে বাধ্য করে জুঁই। বিয়ের পর তার কাছ থেকে বিভিন্ন মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কারসহ ৮৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আর্থিক বিষয় নিয়ে একপর্যায়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
বিপুল অঙ্কের অর্থ-সম্পদ স্থায়ীভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্বামী হুমায়ুন কবিরের স্বাক্ষর জাল করে ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ভুয়া তালাকনামা তৈরি করে জুঁই। ওই ঘটনায় জুঁইসহ কয়েকজনকে আসামি করে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন হুমায়ুন কবির। ওই মামলায় জুঁইসহ আসামিরা এক মাস কারাবাস করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান। এছাড়া জুঁই তার স্বামী হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা এবং হুমায়ুন কবিরও তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন।
বাদী মোস্তফা ফয়সাল বলেন, আমার এবং দুই ভগ্নিপতির বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি জুঁই। জহিরুল ইসলাম জনি, সাইফুল ইসলাম শাকিল, সায়মন ও মোস্তাফিজসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে জুঁই। এসব অপকর্মের প্রতিবাদের কারণে আমার টাকা ফেরত না দিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় টাকা ফেরত পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছি আমি।
তিনি আরও বলেন, মামলা করার পর আমাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছে জুঁই। ফলে বাধ্য হয়ে খুলনা ত্যাগ করেছি আমি। আমি আমার টাকা ফেরত চাই, জুঁইয়ের বিচার চাই।
বার্তা কক্ষ, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯