পবিত্র কুরআনে বিয়ের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, সংযম ও পবিত্রতা অর্জন করা, শারীরিক সুস্থতা ও বংশধারা ঠিক রাখা। ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো, সংযম ও সু-সন্তান লাভ করা। যেমন বলা হয়েছে, مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ অর্থাৎ তোমরা সংযম ও পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিয়ে করো। শুধু বীর্যপাত তথা যৌন চাহিদা মিটাতে বিয়ে করো না।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ابتغوا ما كتب الله لكم অর্থাৎ সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হও। আল্লাহ যা তোমাদের ভাগ্যে রেখেছেন।
বিয়ে করলে মানুষের জীবন একটি রুটিনের মধ্যে চলে আসে। সে নিয়মাবর্তী হয়। অধিক উপার্জনের চিন্তা করে। অযথা কাজ করে না। তার মধ্যে ভালোবাসা, লজ্জা, আনুগত্য সৃষ্টি হয়। মানুষ সমৃদ্ধ ও সুস্থ জীবন যাপন করে।
বিয়ে সুস্থতা, আত্ম প্রশান্তি, আনন্দমুখর সুখী জীবন ও উভয় জগতে সফলতা লাভের মাধ্যম।
বিয়ে মানব সভ্যতার জন্য আল্লাহর অনন্য উপহার। দেশ-প্রেমের শক্ত ভিত্তি। দেশ ও জাতির উচ্চতর সেবা। নানা রকম রোগ-বালাই থেকে বেঁচে থাকার কার্যকরী মাধ্যম বা পথ্য। আল্লাহ তায়ালা যদি মানব সমাজে বিয়ের বিধান দান না করতে তবে পৃথিবী আজ বিরাণ হয়ে যেতো। না, কোনো মানুষ বা সমাজ থাকতো। না, কোনো বসতি বা বাগান থাকতো। [আল মাসালিহুল আকলিয়্যা লিল আহকামিল নকলিয়্যা, পৃষ্ঠা-১৯৫।]
মানবজীবনের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পরিবার অপরিহার্য। নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গড়া হয়েছে মানবসমাজ। আর নারীর প্রবল আকর্ষণ প্রকৃতিগত করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- মানব কুলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তানসন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এ সবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগবস্তু। আর আল্লাহর কাছেই হলো উত্তম আশ্রয়।’ (সূরা ইমরান : ১৪)।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অকৃত্রিম মিলনই হলো তাদের প্রাকৃতিক দাবি। এ মিলন যদি হয় লাগামহীন পন্থায় তবে সমাজ ও সভ্যতায় বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়াই অবধারিত। বস্তুত আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-পন্থা অনুযায়ী নারী-পুরুষের সঠিক সম্পর্কের ওপরই নির্ভর করে সমাজ ও সভ্যতার সুস্থতা ও নিরাপত্তা। আর তাদের উভয়ের মধ্যে খোদায়ী বিধি অনুযায়ী এ সম্পর্ক কেবল বিয়ের মাধ্যমেই হতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাতে সূচনা হয় তাদের পারিবারিক জীবনের।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, একদা নবী করিম [সা.] যুবকদের লক্ষ্য করে বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে বিয়ের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত রোজা পালন করা। [বোখারি ও মুসলিম]
পারিবারিক জীবন ছাড়া মানুষের দাম্পত্য জীবন কোনো অবস্থাতেই সুখের হতে পারে না। অতঃপর তাদের থেকে জন্ম নেয় সন্তানসন্ততি। সন্তান লালনপালন ও সুশিক্ষার জন্য পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। মাতৃক্রোড়কে বলা হয়েছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। আল্লাহ তায়ালা প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা, দয়া, স্নেহ, সহানুভূতি মানুষের প্রকৃতিজাত করে দিয়েছেন। সন্তানের প্রতি পিতামাতার স্নেহ, দয়া এবং পিতামাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রেমপ্রীতি মানুষের চিরন্তন প্রকৃতিজাত নিয়ম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদেরই যুগল থেকে তোমাদের পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব, তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অৃনুগ্রহ অস্বীকার করে?’ (সূরা নাহল : ৭২)।
আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, তোমরা বিয়ে করো যাদের তোমাদের ভালো লাগে (সূরা মায়িদা : ৪)। এর অর্থ হলো, বিয়ে-ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন তার ভালোলাগা বৈধ নারীকে বিয়ে করে। [তাফসির আর-রাজি : ৯/১৭১]। আশ-শাওকানি রা: বলেছেন, যেসব নারীর প্রতি তোমাদের চিত্ত আকৃষ্ট হয় এবং যেসব নারী তোমাদের মনঃপূত হয় তোমরা তাদের বিয়ে করো [ফাতহুল কাদির : ১/৪৪৯]। মুহাম্মাদ ইবনে মুসলিমা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল [সা.] বলেছেন, যখন মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ কোনো পুরুষের অন্তরে কোনো নারীর বিয়ের প্রস্তাব জাগরূক করে তখন তাকে দেখেশুনে যাচাই-বাছাই করা দোষনীয় নয়। [ইবনে মাজাহ : ১৮৬৪]
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক : আপডেট ১:৩০ পিএম, ০৫ মে ২০১৬, বৃহস্পতিবার
এইউ