প্রবাস

প্রবাসে কাজ করছে বাংলাদেশের ৯ লাখ নারী রেমিট্যান্স যোদ্ধা

প্রবাসে কাজ করছে বাংলাদেশের ৯ লাখ নারী নারী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখলেও এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রবাসে কর্মরত নারী কর্মীরা বিশ্বের নানা দেশে অবস্থান করে রেমিট্যান্স অর্জন করে দেশে পাঠাচ্ছে যা উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে ।

বর্তমানে জর্ডানে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করে প্রতি মাসে একজন নারীকর্মী ৫০ হাজার টাকা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন। মাসিক যা আয় করে তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব ভালভাবে সংসার চলে । শত-শত নারী শ্রমিক জর্ডানের পোশাক কারখানায় কাজ করে।

চলতি বছর জানুয়ারি ২০১৯ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৯০ হাজার নারীকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন। এরমধ্যে সৌদী আরবে গেছেন প্রায় ৫৪ হাজার, জর্ডানে গেছেন ১৬ হাজার ৪৭১ জন, ওমানে ১০ হাজার ৪৯৬ জন,কাতারে ৩ হাজার ২৪১ জন নারীকর্মী বিদেশ গিয়ে বাংলাদেশে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।

নারী অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে নারী কর্মীরা বৈধভাবে যাওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক নারী কর্মী তালিকাভুক্ত করছেন। আর এখন নারীদের বিদেশে যেতে কোনো খরচ হচ্ছে না। নিয়োগকর্তারাই টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। কাজেই দালালদের কথা না শুনে যারা বিদেশে যেতে চান,তারা সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেই যেতে পারেন।

নারী রেমিট্যান্স যোদ্ধা রা এখন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়। ফলে তারা অনেক দক্ষ হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস বা গৃহকর্মী কর্মী ছাড়াও অন্যান্য পেশায় আরো বেশি নারীকর্মী পাঠানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলছেন, ‘নারীরা যদি বিদেশে যাওয়ার আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেন এবং একটু সতর্ক ও সচেতন হন, তবেই ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস ও সরকারের নজরদারির কথাও বলছেন তারা। গৃহকর্মীর পাশাপাশি নার্সসহ বিভিন্ন খাতে নারী কর্মী পাঠানোর সময় এসেছে বলেও মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

সরকার নারী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে সৌদী আরবসহ বিভিন্ন দেশের ভাষা শিক্ষা দিয়ে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিদেশে গিয়ে নারী কর্মীদের তেমন কোনো অসুবিধায় পড়তে হয় না।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থান শুরু। ১৯৯১ সালে মাত্র ২ হাজার ১৮৯ জন নারী বিদেশে গিয়েছিলেন। বর্তমানে এ সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি হয় প্রতি বছর।

বর্তমানে ১৬৩ টি দেশে ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৭ জন প্রবাসী রয়েছেন। এরমধ্যে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩২ জন নারী কর্মী রয়েছেন বলে বিএমইটির অক্টোবরের হিসাব থেকে জানা যায়। এরমধ্যে সৌদি আরবে রয়েছেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ২০৪ জন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঢাকাসহ কয়েকটি জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস রপা জানান, বর্তমানে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। অনেক মেয়েরা বয়স লুকিয়ে বিদেশ যেতে চায়। জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোটের মাধ্যমে বয়স যাচাই করেই বিদেশে কর্মী প্রেরণ করা হয়। দক্ষতা সনদ এবং ভাষাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশ পাঠানো হয়।

১৮ বছরের নিচে কেউ তালিকা ভুক্ত হতে পারে না। গৃহকর্মীর বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে বয়স হতে হয় কমপক্ষে ২৫ বছর। অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে ১৮ বছর। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হয়।

বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা জানান, নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া খুবই ইতিবাচক। একজন প্রবাসী পুরুষ কর্মী অনেক সময় কিছু টাকা বিদেশে খরচ করে কিছু টাকা দেশে পাঠান। কিন্তু একজন নারীকর্মী প্রবাসে তার আয়ের পুরোটাই দেশে পাঠায়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঢাকাসহ কয়েকটি জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস রপা জানান,বাংলাদেশে নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি প্রসার হচ্ছে। এদেশের বিশাল নারী জনগোষ্ঠীকে বেকার রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। তাই অর্থনৈতিক,সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারীদের বিদেশে চাকরি সহজ করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী পরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান,নারী কর্মীদের বিদেশে চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন,নারীরা সেখানে গিয়েও রিক্রুটিং এজেন্সির খোঁজ, ভিসা পরীক্ষা এবং অন্য যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন। (বাসস-ইউনিসেফ ফিচার)

বার্তা কক্ষ, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

Share